ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

চিক টেক্সটাইলের দুই পরিচালকের ৪ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৫৬ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৫

শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় চিক টেক্সটাইল লিমিটেডের দুই পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ও ইফতেখার মোহাম্মদকে ৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার সকালে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এটি শেয়ারবাজার নিয়ে কারসাজি মামলার বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়। আর এটা ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলার প্রথম রায়।

রায়ে উল্লেখ রয়েছে, এ মামলার ঘটনা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার আলোকে বাদী পক্ষের উপস্থপিত সাক্ষ্যসমূহ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে দেখা যায় যে, বাদী পক্ষের আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে। কাজেই আসামিরা শাস্তি পাবে।

রায়ে আরো বলা হয়, চিক টেক্সটাইলের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ও  ইফতেখার মোহাম্মদ উভয়কে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যদেশ, ১৯৬৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হল। এছাড়া এ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না না করলে তারদেরকে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, আদায় করা জরিমানার অর্থ সরকার ইচ্ছা করলে ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বার্থে ব্যয় করতে পারবে। অভিযুক্তরা গ্রেফতার বা অত্মসমর্পণ করার তারিখ হতে তাদের শাস্তির মেয়াদ গণনা করা হবে।

রায়ে আরো বলা হয়, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রায়ের অনুলিপি চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পুলিশ কমিশনার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠান হল।

মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান জাগো নিউজকে বলেন, চিক টেক্সটাইলের মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র এবং যুক্তিতর্ক আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছি। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সব কিছু প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে এ রায় ঘোষণা দেন।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক হুমায়ুন কবীর রায়ের জন্য এ তারিখ নির্ধারণ করেন।

শেয়ার কেলেঙ্কারির এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এই দুই আসামিসহ চিক টেক্সটাইল কোম্পানিকেও আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আসামিরা চিক টেক্সটাইলের শেয়ারের দর বাড়ানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। ওই সময় বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে ভাল মুনাফা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মাকসুদুর রসূল ৮ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৪টি ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদ ৮ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার অপারেট করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ২১ ধারা অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

পরে ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল বিএসইসির ওই সময়ের নির্বাহী পরিচালক এম এ রশীদ খান বাদী হয়ে তদন্তের সকল প্রমাণাদিসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বাদী হয়ে মামলা (মামলা নম্বর-১০৮২) দায়ের করেন।

পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি (মামলা নম্বর ৩৫৭৯) স্থানান্তর করা হয়। পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটির নতুন নম্বর দেয়া হয় (১/২০১৫)। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারি করে ৭ টাকার শেয়ার ৪৬ টাকায় উঠানোর অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে দুটি মামলার রায় দিয়েছেন বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে প্রথমটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি নিয়ে গুজব ছড়ানো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ ও সেবা প্রদানের দায়ে মাহবুব সারোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন এ আদালত।

দ্বিতীয় রায় বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডের (বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কারসাজি মামলার আসামি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল ইসলাম ও ‘ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি’ পত্রিকার সম্পাদক এনায়েত করিম প্রত্যেককে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা আর্থিক দণ্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল।

মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সৌদি আরবের আল-আওয়াদ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিডি ওয়েল্ডিংয়ে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ই-মেইলে তথ্য আদান প্রদান করেন। এ তথ্যের কারণে ওই সময় বিডি ওয়েল্ডিং কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। ফলে আসামিরা অনৈতিকভাবে আর্থিক লাভবান হন।

এসআই/এসএইচএস/পিআর