বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ এখন ধ্বংসস্তুপ
কদিন আগেও হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় সকাল থেকে রাত অবধি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের যে বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে থাকতো তা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা নামে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। ৮ জনুয়ারি শুধু হওয়া মাসব্যাপী এ বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল, খাবারের দোকানসহ মোট ৬০৫টি বৈধ স্টল ছিল এ মেলায়। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি।
বাংলাদেশের পাশাপাশি মেলায় অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে ছিল থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
দেশি-বিদেশি এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য কিনতে রাজধানী ও আশপাশের হাজার হাজার বাসিন্দা মেলার প্রতিদিনই ছুটে আসতেন মেলা প্রাঙ্গণে। শুক্রবার ও শনিবার জনসমুদ্রে পরিণত হতো মেলা প্রাঙ্গণ। হাজার পেরিয়ে মেলার ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা দাঁড়াত লাখের ঘরে। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মেলার এক মাসে ৫০ লাখ দর্শনার্থীর পা পড়ে মেলা প্রঙ্গণে।
শুধু দেশি-বিদেশি পণ্য কেনা নয়, মেলার পুরো একমাস বাণিজ্য মেলা প্রঙ্গণ রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছিল। ক্রেতা-বিক্রেতা ও বিনোদনপ্রেমীদের এ মিলন মেলা ৯ ফেব্রুয়ারি সূর্য ডোবার পর পরই ভাঙনের সুর বাজতে থাকে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে নিতে থাকেন তাদের পণ্য। আর ১০ ফেব্রুয়ারির সূর্য উঠার পর পরই ভাঙা শুরু হয় মেলা প্রাঙ্গণের স্থাপনাগুলো।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, পুরো বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ এক প্রকার ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে। ট্রাকে করে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের স্টল নির্মাণের সামগ্রী সরিয়ে নিচ্ছেন। যে নির্মাণ সামগ্রীর সমন্বয়ে ক্রেতা-দর্শনার্থী আকর্ষণ করতে মেলার শুরুতে। বাহারি অট্টলিকা তৈরি করেছিলেন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান। একতলা, দুইতলার পাশাপাশি তিনতলা স্টলও ছিল এই মেলা প্রাঙ্গণে।
ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া স্টলের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে ইট পেতে চলাচলের যে রাস্তা করা হয়েছিল তা কয়েকজন শ্রমিককে তুলে ফেলতে দেখা যায়। এমনকি মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য যে গেট তৈরি করা হয়েছিল তা-ও ভেঙে ফেলা হয়েছে। অবশ্য নিদর্শন হিসেবে গেটের সিঁড়ি রয়ে গেছে।
মেলা প্রাঙ্গণের রাস্তার ইট তোলার কাজ ব্যস্ত রহিম নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসত। এখন দিনে ৫-১০ জনও সাধারণ মানুষ এই মাঠে আসে না। যারা স্থাপনা ভাঙা এবং ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ করছেন শুধু তারাই আসেন। কিছুদিন পরে এসব ধ্বংসস্তুপ সরানো হলে দেখবেন স্থানটি খাঁ খাঁ করছে।’
একটি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ভাঙার কাজ করা খায়রুল বলেন, ‘এই দেখেন ভাই এটি (একটি প্যাভিলিয়ন) কয়েকদিন আগেও খুব সুন্দর একটি তিনতলা ভবন ছিল। এখন ধ্বংসস্তুপ। অথচ এই ভবন তৈরি করতে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল এখন তার বেশিরভাগই আবর্জনায় পরিণত হয়েছে।’
এমএএস/এসআর/এমএস