ফের পতন ধারায় শেয়ারবাজার
টানা দরপতনের পর সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক কিছুটা বাড়লেও মঙ্গলবার আবার দরপতন হয়েছে।
গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর পরই শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দেয়। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া তিন কার্যদিবসে টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় দেড়শ’ পয়েন্ট কমে যায়।
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ধরলেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমিয়েছে। এতেই শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ঋণের লাগাম টেনে ধরেছে। মূলত এ কারণেই শেয়ারবাজরে দেখা দেয় টানা দরপতন।
টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের পর সোমবার ডিএসই ও সিএসইতে সবকটি মূল্যসূচক কিছুটা বাড়ে। তবে দুই বাজারেই কমে যায় লেনদেনের পরিমাণ। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে দুই বাজারেই প্রধান মূল্যসূচকের পতন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
অপরদিকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মুদ্রানীতির তুলনায় কিছুটার কমানো হয়েছে। তবে আগের অর্ধে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে নতুন মুদ্রানীতিতে তার থেকে লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। সুতরাং নতুন মুদ্রানীতির কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। কিছু কুচক্রি মহল অনৈতিক ফায়দা লুটতে বাজারে গুজব ছড়াচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এ ধরণের গুজব থেকে দূরে থাকা উচিত।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, মুদ্রানীতির কারণে শেয়াবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো যুক্তি নেই। কারণ শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কিছু নতুন মুদ্রানীতিতে নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের যে মুদ্রানীতি দিয়েছে তাতে আগের মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুদ্রানীতি ঘোষণার পর টানা তিন কার্যদিবসের দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২২ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর সোমবার সূচকটি ২৬ পয়েন্ট বাড়ে। আর মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইর অপর দুটি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩১৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১৪টি। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দাম।
বাজারটিতে দিনভর লেনদেন হয়েছে ৭০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮৮৯ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় মঙ্গলবার লেনদেন কমেছে ১৮২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
টাকার অংকে এদিন ডিএসইতে সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার। ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- সিমটেক্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেরেশন, পাওয়ার গ্রীড, বারাকা পাওয়ার এবং বার্জার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৭০ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৭২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন হওয়া ২৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে ৬৪টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
এমএএস/এমএমজেড/এমএস