ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

হঠাৎ চাঙা বীমা খাত

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে অনেকটা রূপকথার আলাদিনের চেরাগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি!

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই সাধারণ বীমা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এক মাসের মধ্যে বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। হঠাৎ করে শেয়ারের দাম এমন উল্লম্ফন হওয়া বীমা কোম্পানিটি শেষ ১০ বছরে মাত্র দুবার শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিতে সক্ষম হয়েছে।

নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা খুব একটা না থাকলেও প্রতি বছরই কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ার দিচ্ছে। বোনাস শেয়ারের ওপর ভর করে নিয়মিত ১০ শতাংশের ওপরে লভ্যাংশ দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ভালো কোম্পানি বা ‘এ’ গ্রুপে স্থানও করে নিয়েছে।

লভ্যাংশের ক্ষেত্রে বোনাস শেয়ার নির্ভর এই সাধারণ বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম ২৪ জানুয়ারি লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ২০ পয়সা। অথচ গত ২৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১৫ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে।

অন্যভাবে বলা যায়, একজন বিনিয়োগকারী ডিসেম্বর মাসের শেষ কার্যদিবসে সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স’র শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে বর্তমানে তার সেই বিনিয়োগের অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ছয় হাজার টাকার ওপরে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে কোম্পানিটির শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা এক মাস খাটিয়ে সাড়ে আট লাখ টাকা মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন অনেকটা রূপকথার আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো।

সাধারণ বীমা খাতের অপর প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স। গত ২৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। সেখান থেকে টানা বেড়ে ২৪ জানুয়ারি এর শেয়ারের দাম ৩৮ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

অন্যভাবে বলা যায়, যদি কোনো বিনিয়োগকারী ডিসেম্বরের শেষে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স’র শেয়ারে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন, তাহলে বর্তমানে তার কাছে থাকা শেয়ারের মূল্য ১১ লাখ এক হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ লাখ টাকা এক মাস খাটিয়ে ছয় লাখ টাকার ওপরে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।

শেয়ারের দামে এমন উল্লম্ফন ঘটলেও কোম্পানিটি অনেকাংশে বোনাস শেয়ার নির্ভর। শেষ ১০ বছরে কোম্পানিটি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা মাত্র তিনবার নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন। তবে শেষ তিন বছরে সাধারণ বীমা কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলিয়ে ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ গ্রুপের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

শুধু সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স বা অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স নয় সম্প্রতি বেশির ভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ারের দামে এমন চাঙাভাব বিরাজ করছে। এর মধ্যে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে গত এক সপ্তাহে দেড় ডজন বীমা কোম্পানির বিষয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে।

সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ, মেঘনা লাইফ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স।

কোম্পানিগুলোর কাছে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার করণ জানতে চেয়ে ডিএসই থেকে নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসের জবাবে প্রতিটি কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানায়, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পেছনে তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীমা কোম্পানির বার্ষিক হিসাব শেষ হয় ডিসেম্বরে। সে কারণে শিগগিরই বীমা কোম্পানিগুলো থেকে ২০১৮ সালের লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। এটাকেই পুঁজি করে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী ফায়দা লুটতে চাহিদা বাড়িয়ে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। বীমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ার কারণে শেয়ারের চাহিদা বাড়ানো তুলনামূলক সহজ। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। গুজবে বা লোভে পড়ে শেয়ার না কিনে কোম্পানির অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করতে হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জোগো নিউজকে বলেন, লভ্যাংশ ঘোষণার সময় এসেছে, এ কারণে হয়তো বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। তবে এক মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়ে দুই-তিনগুণ হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমাদের বাজারের তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কখন কোন শেয়ারের দাম বাড়ে, আর কোনটা বাড়ে না; তা বলা মুশকিল। বাজার খুব একটা যৌক্তিক আচরণ করছে না।

তিনি বলেন, যারা নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস শেয়ার দেয় তাদের অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে! আর যারা নগদ লভ্যাংশ দেয় তাদের সক্ষমতা আছে, এটা প্রমাণিত। আমাদের বিনিয়োগকারীরা এসব চিন্তা করেন না। ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তা করেন না। এটা উচিত নয়। একটি কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে বোনাস শেয়ার দিচ্ছে কিন্তু ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে না, তাহলে ওই কোম্পানি কিছুতেই ভালো কোম্পানি নয়।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান জগো নিউজকে বলেন, নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে একটি কোম্পানি যদি বছরের পর বছর ধরে বোনাস শেয়ার দেয় তাহলে কিছুতেই সেই কোম্পানি ভালো নয়। ‘এ’ গ্রুপে থাকলেও এ ধরনের কোম্পানি ফ্রড (প্রতারক)। নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা না থাকায় তারা লভ্যাংশ হিসাবে বোনাস শেয়ার দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এমন শেয়ার থেকে বিরত থাকা উচিত।

‘বোনাস শেয়ার দিয়ে শেয়ারের সংখ্যা বাড়িয়ে এখন কারা এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানোর পেছনে রয়েছে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত’- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এমএএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন