শিল্পঋণে খেলাপি ৪৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা
শিল্প খাতে ব্যাংকগুলোর বেড়েছে ঋণের পরিমাণ। নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় বিতরণ করা ঋণ আর আদায় হচ্ছে না। ফলে ঋণের বড় অংশই একের পর এক খেলাপি হয়ে পড়েছে। গেল বছরের সেপ্টেম্বর শেষে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; যা এ খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বড় শিল্পে ঋণ কেলেঙ্কারি নানা জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এখনও পর্যন্ত মোট শিল্প ঋণের ৭৭ হাজার কোটি টাকা বা ৮১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বিতরণ হয়েছে বড় শিল্পে। অন্যদিকে মাঝারি শিল্পে বিতরণ হয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র শিল্পে মাত্র ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে গত বছর ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দেয়। ফলে ঋণ নিয়ে সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, বড় শিল্পের মালিকদের অনেকেই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশসহ নানা সুবিধা নিয়ে খেলাপি দেখানো থেকে বিরত থাকেন। ফলে অন্য খাতের তুলনায় শিল্প খাতের ঋণখেলাপি কম হয়। তবে জনতা ব্যাংকে এননটেক্স ও ক্রিসেন্ট লেদারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বড় অংশ খেলাপি হওয়ায় এবার শিল্প ঋণের খেলাপি বেশি বেড়েছে। এরপরও সামগ্রিক খাতের তুলনায় শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের হার কম রয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। একই সময়ে শিল্প ঋণে খেলাপি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। গত এক বছরে পুরো ব্যাংক ব্যবস্থায় যে ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে; এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিল্প ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে শিল্প খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা; যা এ খাতে বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এদিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্প খাতে মোট ৯৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিতরণ বেড়েছে ১৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়াদি ঋণ ১৯ হাজার ১১১কোটি টাকা। আর চলতি মূলধন বিতরণ করা ঋণ ৭৫ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আগে দেয়া ৮১ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার ঋণ আদায় হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে ২৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শিল্প ঋণের ৭৭ দশমিক ৪০ শতাংশ জোগান দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বিদেশি ব্যাংকগুলো দিয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিয়েছে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ ঋণ।
এসআই/এমবিআর/আরআইপি