নতুন রূপে ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে ‘শতরঞ্জি’
কুমারের তৈরি পাত্র, কামারের দা-বটি আর রঙ-বেরঙের সুতার তৈরি পাপোশ, ম্যাট, ব্যাগ, ও বিছানার চাদসহ আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব পণ্য নিয়ে নতুন রূপে বাণিজ্য মেলায় হাজির হয়েছে কারুপণ্যের ‘শতরঞ্জি’।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ৩৯ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে শতরঞ্জির সব পণ্য।
হস্তশিল্প একটি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে। তারই বড় উদাহরণ শতরঞ্জি। রাজা-বাদশাহর আমলে দস্তরখান বা মেঝেতে বিছিয়ে খাওয়া ও বিছানার চাদর হিসেবেও ব্যবহার হতো এসব পণ্য। জীবন-যাত্রার মানের পরিবর্তনের পাল্টেছে শতরঞ্জির ব্যবহার প্রণালী। শ্যাগী, ফ্লোর ম্যাট, একরেলিক ফ্লোর ম্যাট, ডোর ম্যাট, জুট ব্যাগসহ রয়েছে শতাধিক পণ্য। রংপুর অঞ্চলের দরিদ্র নারীদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী এ হস্তশিল্প দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন সুনাম ছড়িয়েছে উইরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্ব বাজারে।
মেলায় কাঠের তৈরি তিনতলা বিশিষ্ট ‘শতরঞ্জি’ প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে ঢুকলেই ক্রেতা দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে ঐতিহ্যবাহী রঙ-বেরঙের সুতা আর গ্রাম বাংলর প্রকৃতি নির্ভর নকশার সমন্বয়ে কাঁচা পাট, পাটের সুতলিসহ দেশি কাঁচামাল দিয়ে তৈরি শতরঞ্জি, পাপোশ আর বিভিন্ন ধরনের ম্যাট। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে নকশা কারুপণ্যের মধ্যে ব্যাগ ও বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, কামিজ, থ্রি-পিস নকশিকাঁথাসহ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য। এ ছাড়া মাটির তৈরি পাতিল কামারের তৈরি দা, বটি, কুড়াল, ছুরি, জেলেদের মাছ ধরার জাল ও কাঠশিল্পের বিভিন্ন পণ্য।
মেলা উপলক্ষে দেশি-বিদেশি ক্রেতা দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিয়েছে। এ ছাড়া একটি কিনলে একটি ফ্রি, দুইটি কিনলে তিনটি ফ্রিসহ রয়েছে নানা আকর্ষণীয় অফার।
মেলায় শতরঞ্জির প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার সুমন সরকার জাগো নিউজকে জানান, শতরঞ্জিকে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছি। গ্রাম বাংলায় এখনও ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু বিলুপ্তির পথে এরকম পণ্য মেলায় বিক্রি ও পদর্শন করছি। যেমন কুমারের তৈরি বিভিন্ন পাত্র, কামারের দা, বটি, বাশের তৈরি কুলা, ঝার, খালইসহ বিভিন্ন পণ্য এখানে পদর্শন করা হচ্ছে; যার অনেকগুলোই শহরের মানুষ চেনেন না। আবার প্লাস্টিক নির্ভরতার কারণে অনেক পণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। তাই গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সঙ্গে পরিচয় করানোর পাশাপশি এসব পণ্য ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাণিজ্য মেলায় হস্তশিল্পের পণ্য নিয়ে হাজির হয় কারুপণ্য শতরঞ্জি। এবার মেলায় বড় পরিসরে ঐতিহ্যবাহী পণ্য তুলে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন দেশীয় এ হস্তশিল্পের কারুপণ্য শতরঞ্জিতে মেলা উপলক্ষে দেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ মূল্যছাড়।
সুমন সরকার বলেন, শতরঞ্জির কারুপণ্য তৈরি করে গ্রামের দরিদ্র নারীরা। এসব পণ্য পরিবেশ বান্ধব। এটি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি রফতানি করছি। বিদেশিদের কাছে আমাদের কারুপণ্যেরে ব্যাপক চাহিদা। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার ৪০টি মতো দেশে রফতানি হচ্ছে এসব পণ্য। বর্তমানে দেশের হস্তশিল্প রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে বলে জানান শতরঞ্জির এ কর্মকর্তা।
মেলায় শতরঞ্জির পণ্যের এক ক্রেতা পারভীন আক্তার বলেন, শতরঞ্জির পণ্যগুলো দেখতে সুন্দর ও পরিবেশ বান্ধব। এ ছাড়া এটি আমাদের দেশীয় পণ্য তাই ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মেলায় শতরঞ্জির নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য পাওয়া যায়। এ সময় অনেক ছাড়ও পাওয়া যায়। তাই বরাবারই মেলা থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনি। এবার মাটির তৈরি পাতিল, বাশ, কাঠের তৈরি পণ্যসহ ঐতিহ্যবাহী অনেক পণ্য তুলেছে। যার অকেনগুলোই আমি চিনতাম না। তাই এখানে গ্রাম-গঞ্জের এসব পণ্য দেখে ভালই লাগলো।
এসআই/এমবিআর/আরআইপি