সূচকের সঙ্গে এবার লেনদেনেও ‘তেজিভাব’
নতুন বছরের দ্বিতীয় কার্যদিবসেও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের উত্থান হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ৯ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো দেশের শেয়ারবাজার।
মূল্য সূচকের টানা ঊর্ধ্বমুখিতার পাশাপাশি লেনদেনেও তেজিভাব দেখা দিয়েছে। তিনশ’ থেকে চারশ’ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া ডিএসইর লেনদেন ১০ কার্যদিবস পর ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে (২৭ ডিসেম্ব) পাঁচশ’ কোটি টাকার ঘরে উঠে আসে। নতুন বছরের প্রথম কার্যদিবসেও লেনদেনের গতি অব্যাহত থাকে। আর বুধবার লেনদেন বেড়ে প্রায় সাতশ’ কোটি টাকা হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা দূরে ঠেলে বড় ধরনের হানাহানি ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় শেয়ারবাজারে এমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, নির্বাচনী বছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় ২০১৮ সালে সার্বিকভবে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো ছিল না। তবে রাজনৈতিক হানাহানি ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলই আবার ক্ষমতায় এসেছে। এতে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ২০১৮ সালে শেয়ারবাজার খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু এখন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়ে গেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যায়। যার ইতিবাচাক প্রভাব পড়বে শেয়ারবাজারেও।’
তিনি বলেন, ‘বছরের শুরুতেই আমরা শেয়ারবাজারে বড় উত্থান দেখলাম। এখন বাজার যাতে ভালো থাকে সে জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভবিষ্য বাজার ভালো রাখতে আমরা ডিবিএ’র পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবনা দেবো। ডিবিএ’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বসে প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার মূল্য সূচক বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২২৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৮০টি। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯১২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৩০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে এদিন ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বিবিএস কেবলসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩০ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইফাদ অটোস।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- সায়হাম কটন, বেক্সিমকো, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, জেএমআই সিরিঞ্জ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, বিডিকম এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির।
এমএএস/এনডিএস