১০ বছরে জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান বেড়েছে দ্বিগুণ
শিল্প ও উদ্যোক্তা বান্ধব নীতিগ্রহণ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। যা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সেই হিসেবে গত ১০ বছরে শিল্পখাতের অবদান প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ তথ্য জানান। বিগত পাঁচ বছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাফল্য তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আযোজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে শিল্প মন্ত্রণালয় গত পাঁচ বছরে বেশ কিছু শিল্প ও উদ্যোক্তা বান্ধব নতুন নীতি, আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬, জাতীয় এসএমই নীতিমালা, ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩, ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা-২০১৫, রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী-২০১৩, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডাডর্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন আইন-২০১৮ এবং ট্রেড মার্কস বিধি-২০১৫ অন্যতম।
শিল্পমন্ত্রী জানান, বিগত পাঁচ বছরে দেশের কোথাও সারের সংকট হয়নি। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে সারের চাহিদা মেটাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে বার্ষিক পাঁচ লাখ ৮০ হাজার আটশ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’ শীর্ষক দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। চাহিদামাফিক সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি বাফার গুদাম নির্মাণের কাজ চলছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, হাজারিবাগের ট্যানারি স্থানান্তর ছিল নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ৬৩ বছর পর হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর সম্ভব হয়েছে। এক হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়েছে। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দুটি ট্যানারি শিল্পপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ একরেরও বেশি জায়গার ওপর এপিআই শিল্পপার্ক স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) আওতাধীন রি-রোলিং মিল ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড পুনরায় চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএসইসি এবং জাপানের হোন্ডা মটরস কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে গঠিত বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটর সাইকেল বাংলাদেশে উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে। বিএসটিআইয়ের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিগুলোতে পরীক্ষিত ৩৫টি পণ্যের ৩০৫টি প্যারামিটারের ৪১১টি পরীক্ষণ পদ্ধতি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড থেকে অ্যাক্রেডিটেশন সনদ পেয়েছে। এর আগে ২৭টি পণ্যের ১৬১টি প্যারামিটার ভারতের এনএবিএল থেকে অ্যাক্রেডিটেশন অর্জন করেছে।
সরকারের ‘ঘরে ঘরে কর্মসংস্থান সৃষ্টির’ প্রকল্পের আওতায় অক্টোবর ২০১৮ পর্যন্ত ১৩,৪৩৬ জন পুরুষ এবং ৯,৮৭৪ জন মহিলাসহ সর্বমোট ২৩,৩১০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)। এর মধ্যে ৩,৮০৪ জন পুরুষ এবং ৩,৭২১ জন মহিলাসহ সর্বমোট ৭,৫২৫ জন প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হবার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি পেয়েছেন।
বিশেষ ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী পণ্যের মালিকানা সুরক্ষায় জাতীয় সংসদে পাসকৃত জিআই ‘ল’ এর আওতায় জাতীয় মাছ ইলিশ এবং ঐতিহ্যবাহী জামদানিকে জিআই সনদ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি পণ্যের গুণগতমান উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ‘প্রোডাক্টিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ৪৭ জনকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর এনপিও ২০১৭ সালের জন্য ৬টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত আরও ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাকে এ পুরস্কার দেয়া হবে।
গত পাঁচ বছরে দেশে স্থানীয়ভাবে এক হাজার ১৯৫টি বয়লার তৈরি হয়েছে এবং মোট দুই হাজার ৭৮৯টি বয়লারের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ হাজার বয়লার পরিচারকের পরীক্ষা গ্রহণ এবং দুই হাজারেরও বেশি জনকে বয়লার পরিচারক সনদ দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪৯৭ জন এসএমই উদ্যোক্তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে ৭৮ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। এর মধ্যে ৪৭০ জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন।
জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বেসরকারিখাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৭০ জনকে সিআইপি (শিল্প) কার্ড দেয়া হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হালিমসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/এএইচ/আরআইপি