আরও কমেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
রাজধানীর বাজারগুলোতে দুই সপ্তাহ ধরে কমছে দেশি পেঁয়াজের দাম। চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ৫ টাকা। এ নিয়ে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমলো ১৫ টাকা।
পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় রয়েছে কাঁচামরিচ। সেই সঙ্গে বাজারে ভরপুর রয়েছে শীতের শাক-সবজি। ফলে অধিকাংশ শাক-সবজির দাম রয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। তবে পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনও চড়াই রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে আসা নতুন আলুর দামও কিছুটা বাড়তি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, হাজীপাড়া, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। যে কারণে মজুদদাররা মজুদ করে রাখা পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। যে কারণে পেঁয়াজের দাম কমছে। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের দামও কিছুটা কম।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. রুবেল মিয়া বলেন, ‘চলতি মাসের শুরু থেকেই পেঁয়াজের দাম কমছে। তবে সব থেকে বেশি কমেছে শেষ দুই সপ্তাহে। এই দুই সপ্তাহে কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে ১৫ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে-এমন ধারণা থেকে অনেক মজুদদার পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছিলেন। কিন্তু সরবরাহে ঘাটতি না হওয়ায় তারা ধরা খেয়ে গেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। যে কারণে মজুদ করা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে সরবরাহ আরও বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে।’
রামপুরার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আজিজ বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজ মজুদ করে রাখায় দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাটারা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এবারও পেঁয়াজ নিয়ে মজুদ করে রেখেছিল। কিন্তু মজুদদাররা এবার ধরা খেয়ে গেছে। প্রায় সব ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ রেখে লোকসানের মুখে পড়েছেন। কিছুদিন পরেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। সুতরাং আরও বেশি দিন মজুর থাকলে তাদের লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হবে।’
পেঁয়াজের মতো দাম কমার তালিকায় রয়েছে কাঁচামরিচ। বাজারভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। পোয়া (২৫০ গ্রাম) হিসাবে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ টাকা।
এদিকে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় পাকা টমেটো ও গাজর ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। ফুলকপি বাজার ও মানভেদে পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকায়। বিচিবিহীন শিম আগের সপ্তাহের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। তবে বাজারে নতুন আসা চিকন বিচিসহ শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি।
লাউ ও বরবটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পিস। আর বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। তবে কিছুটা কমেছে বেগুনের দাম। বাজারভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
গাজর আগের মতোই ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি। আর নতুন আসা কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা কেজি। দাম অপরিবর্তিত থাকায় পটল ও শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি।
শীতের সবজির পাশাপাশি বাজারে এসেছে নতুন আলু। বাজারভেদে নতুন আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। তবে পুরাতন আলুর আগের মতো ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারভেদে এক আঁটি পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকা। লাল ও সবুজ শাক বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা আঁটি। লাউশাক পাওয়া যাচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। ১০-২০ টাকা আঁটি পাওয়া যাচ্ছে পুঁইশাক।
দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার মুরগি, ডিম, গরু ও খাসির মাংস এবং মাছের দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা ডজন। গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারই ইলিশ মাছে ভরপুর। ৬০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। আর পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পিস। আর ছোট আকারের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।
আগের সপ্তাহের মতোই রুই মাছ বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকা কেজি। পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। শিং মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৬০ টাকা, পাঙাশ ১২০-১৫০ টাকা, সরপুঁটি ১৫০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী তোয়াব আলী বলেন, ‘বাজারে এখন শীতের সব সবজি চলে এসেছে। যে কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই সবজির দাম স্থিতিশীল। নতুন আলুর দাম এখন কিছুটা বেশি হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই কমে যাবে। তখন পুরাতন আলুর দাম আরও কমে যাবে।’
এমএএস/এসআর/এমএস