ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ফের রাজনৈতিক বিবেচনায় ৪ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৮:৫৬ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

শুরুতে আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও চার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সবুজ সংকেত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের শেষ সময়ে সায় পাওয়া চার ব্যাংক হলো- কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ, দ্য বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক এবং দ্য সিটিজেন ব্যাংক। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বাকি তিন ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় অনুমোদন পায়নি।

এর আগেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয় শেখ হাসিনার নেতৃতাধীন মহাজোট সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই সমালোচনা উপেক্ষা করে সোমবার গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন চার ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, পর্ষদের সভায় চারটি ব্যাংকের প্রস্তাব তোলা হয়। একটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাকি তিনটি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের প্রস্তাবে ও নথিপত্রে কিছু ঘাটতি ও ত্রুটি রয়েছে। সেগুলো সংশোধন করে দিলেই অনুমোদন দেবে পর্ষদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ চালু করার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত মেলে। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কে বা কারা পাচ্ছেন বাকি তিন ব্যাংক

সিরাজুল ইসলাম বলেন, দ্য বেঙ্গল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক তিনজনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে কর সংক্রান্ত মামলা চলছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে আমাদের জানালে সেটির অনুমোদন দেবে পর্ষদ।

দ্য বেঙ্গল ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।

দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। এ ব্যাংক প্রসঙ্গে মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সিটিজেন ব্যাংকের প্রস্তাবে কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেগুলা ঠিকঠাক করে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রবাসী কাশেমের বিদেশে কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠালে তা পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। পর্ষদ সেটি বিবেচনা করে ব্যাংক স্থাপনের আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনট্যান্ট) দেবে।

এর আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে নয়টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। সেগুলোর বেশিরভাগই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। এর মধ্যে নতুন এই চারটি ব্যাংকের লাইসেন্স মিলিয়ে দেশে মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২টিতে।

সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়াদ শেষের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তাই উদ্যোক্তারা সরকারকে এ ব্যাপারে এক ধরেনর চাপ তৈরি করেন। কারণ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে তখন হয়তো পুরো বিষয়টি ফাইলবন্দি হয়ে যাবে। তাই উদ্যোক্তাদের লবিংয়ে ও সরকারের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি লিখেন। অর্থমন্ত্রী সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বরও এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেয়া ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্ভবত, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রস্তাবিত একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আপনাকে প্রস্তাবিত সবগুলো ব্যাংককে একে একে লাইসেন্স দেয়ার অনুরোধ করছি।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স প্রদানে সম্মত হয়েছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন।

যদিও দেশে ব্যাংক বেশি হয়ে গেছে বলে গত ২৪ অক্টোবর মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী। সেদিন তিনি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যাংকিং খাত ভালো আছে। তবে ব্যাংকিং খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে। অনেক ব্যাংক, অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটোই বেশি। এটা মনে হয়, একটু সীমিতকরণ দরকার হতে পারে।

বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৪টি। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের এই সংখ্যা বেশি বলে মনে করেন অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ।

নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, শুধু রাজনৈতিক ইচ্ছায় বাংলাদেশ ব্যাংক আগে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছিল। এখন ব্যাংকগুলোর অবস্থা কী তা সবাই জানে। নতুন করে আরও ব্যাংক দিলে এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর হওয়া উঠিত ছিল।

এদিকে নতুন প্রজম্মের নয় ব্যাংকের মধ্যে অন্ততপক্ষে চারটির ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক অন্যতম।  বাকিগুলোর বেশির ভাগই কোনো রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে ২০১২ সালে নয়টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেয়া নিয়ে সেসময় সমালোচনা হয়। পরে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) মালিকানায় সীমান্ত ব্যাংকের অনুমোদন দেয় সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা আবেদন ফি দিয়ে নতুন ব্যাংকের জন্য পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ উদ্যোক্তাদের ৪০০ কোটি টাকা জোগান দিয়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয়। তবে আগের মেয়াদে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও এবার সেটি করা হয়নি।

এদিকে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ আগস্ট কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ' নামে পুলিশকে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ট্রাস্ট্র ব্যাংকের আদলে পুলিশ বাহিনীর জন্য এটি একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হবে। যা চূড়ান্ত অনুমোদন পেল আজ।

জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে ২০১৭ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মূলধনের ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে মূলধন সংগ্রহ শেষ হয়। গুলশানে পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে করা হয়েছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। এরই মধ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মশিউহুল হক চৌধুরীকে।

এসআই/জেডএ/এমএস

আরও পড়ুন