দুই বছর আগের অবস্থানে ডিএসইএক্স
বড় দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। রোববার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স কমেছে এক শতাংশের ওপরে। এতে প্রায় দুই বছর আগের স্থানে ফিরে গেছে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স। মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দুই বাজারেই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সে সঙ্গে দর হারিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
ডিএসইতে এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। আর ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৯ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ২১২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ফলে ২০১৭ সালের ৮ জনুয়ারির পর সূচকটি সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞ ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সব মহলেই এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। দরপতনের এটি একটি কারণ হতে পারে। এর বাইরে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজার ফেলছে কি না সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটের কারণেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের এ আস্থাহীনতার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ সমষ্টিক অর্থনীতি এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো হচ্ছে, রেমিট্যান্সও ভালো আসছে। রফতানির প্রবৃদ্ধিও ভালো। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই।’
শেয়ারবাজারে নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়ছে কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রভাব হয় তো থাকতে পারে। তবে নির্বাচনকেন্দ্রীক কোনো গোলযোগ এখনও দেখা দেয়নি। সুতরাং শুধুমাত্র নির্বচনী অনিশ্চয়তার কারণে বাজার পড়ার কোনো কারণ নেই।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক আরেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজার পড়ার মূল কারণ হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। যে কারণেই হোক বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি প্রভাব হয় তো বাজারে থাকতে পারে। তবে শেয়ারবাজারে নির্বাচনের প্রভাব খুব একটা থাকে না। এখন দেখার বিষয় কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে কি না।’
এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৮৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে কেপিসিএলের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকের ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- বিবিএস কেবলস, অ্যাকটিভ ফাইন, ডেল্টা লাইফ, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, বিএফএস থ্রেড ডাইং, সামিট পাওয়ার এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ১২৮ পয়েন্ট কমে ৯ হাজার ৭১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৭টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১৫২টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দাম।
এমএএস/এএইচ/জেআইএম