শেষ দিনে জমজমাট বাপা এক্সপো
ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ‘৬ষ্ঠ বাপা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই দেশি-বিদেশি ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণা লক্ষ্য করা গেছে। মেলার শেষদিন হওয়ায় এ ভিড়টা বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলা চলছে। তিন দিনব্যাপী মেলার শেষ দিন আজ। ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও এক্সট্রিম এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট সলিউশনের উদ্যোগে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। মেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি ১৪৯টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশের গুঁড়া মসলা উৎপাদক ও রফতানিকারক কোম্পানিগুলোর জন্য ভারতের লিথোটেক কোম্পানি নিয়ে এসেছে আধুনিক মেশিন। এই মেশিন দিয়ে ছোট থেকে বড় কোম্পানি মানসম্মত মসলা তৈরি করতে পারবে। এজন্য কোম্পানিগুলোর খরচ পড়বে তুলনামূলক কম। বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো থেকে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা এ মেশিন কিনতে পারবেন।
লিথোটেক ফুট স্পাইস মেশিনারিজের কর্মকর্তা আফজাল এম কাতাদিয়া। মসলা তৈরির অাধুনিক মেশিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি নমুনা মেশিন মেলায় আনা হয়েছে। এই মেশিনটি চাহিদা অনুসারে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করা হয়। এর উৎপাদন ক্ষমতা ঘণ্টায় ৫০ কেজি থেকে আড়াই টন পর্যন্ত। এক মেশিন দিয়েই আদা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, গরম মসলা, ডালসহ বিভিন্ন মসলা গুঁড়া করা যায়।’
আফজাল এম কাতাদিয়া আরও বলেন, ‘ভারতের মহারাষ্ট্রে আমাদের প্রধান কার্যালয়। বাংলাদেশের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আমাদের কাছ থেকে মেশিন ক্রয় করেছে। তারা আমাদের মেশিন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এবার মেলায় অংশগ্রহণ করেছি।’
মেলায় স্টল দিয়েছে হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ। স্টলটিতে কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্টলটিতে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি ম্যাংগো আইস পপ ও ম্যাংগো আইস ললির দিকে। যে পণ্যটি সুনামের সঙ্গে দেশে ও বহির্বিশ্বে রফতানি হচ্ছে।
পণ্যটি সম্পর্কে জানতে চাইলে হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাট্রিজের সেলস কো-অর্ডিনেটর নাঈম আকন বলেন, ‘এই পণ্যটিসহ কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য বর্হিবিশ্বের ১৪টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। আমাদের পণ্যের গুণগতমান অন্যান্য যেকোনো কোম্পানির চেয়ে অনেক ভালো।’
মেলার ৪৫৮ নম্বর স্টলটির নাম বর্ষা এন্টারপ্রাইজ। এটি ভারতের বেঙ্গালুরের একটি প্রতিষ্ঠান। মূলত আন্তর্জাতিক গুণগতমানের চারাগাছ তৈরির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতকারক উপকরণের একটি প্রতিষ্ঠান এটি।
শনিবার স্টলটিতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টলটিতে ছিলেন কে এইচ পরমেশ। তিনি জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্ষা চারা তৈরির ট্রে, আমরুথ, বর্ষা নেট, বর্ষা কোয়ার-পিট, হাস্ক চিপস পাওয়া যায়। বর্ষা চারা তৈরির ট্রেগুলো এইচআইপিএস থেকে তৈরি। এতে বীজ নষ্ট হয় না। কম জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে চারাগাছ তৈরি করা যায়। আর ‘বর্ষা অামরুথ’ একটি ১০০ শতাংশ জৈব সার, যা ভার্মি কমপোস্ট থেকে তৈরি। এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় চারা তৈরিতে।
মেলার দর্শণার্থীদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বিআরবি হসপিটালস লিমিটেড। ফ্রি চিকিৎসার বিষয়টি নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের। মেলা ঘোরাঘুরি শেষে কিংবা ঘোরার ফাঁকে ব্লাড সুগার টেস্ট, প্রেসার ও ওজন জানতে পারছেন দর্শনার্থী-ক্রেতারা। পাশাপাশি মিলছে চিকিৎসকের ফ্রি পরামর্শ। মেলার ৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে এ ‘সেবা বুথ’ চালু করেছে বিআরবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মেলায় কনফেনশনারি জুস, ড্রিংস, বেকারি, মসলা, নুডলস, স্ন্যাকস, বেভারেজ, ডেইরি, ফ্রজেন ফুড ক্যাটাগরির হরেক পদের খাদ্যপণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রি করছে ‘প্রাণ’। এ ছাড়া রয়েছে টেস্টি ট্রিট ও মিঠাইয়ের নানা পদের সুস্বাদু খাবার। তবে প্রাণ-এর স্টলে বেশি বিক্রির মধ্যে স্ন্যাকস আইটেমের টান পড়েছে। ফ্রজেন আইটেমও কিনছেন ক্রেতারা।
প্রাণ-এর বিপণন শাখার ম্যানেজার জানান, দেশের বাজারে প্রাণ-এর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ক্রেতাদের আস্থার প্রতিদান দিতে ‘প্রাণ’ নিত্যনতুন সব পণ্য গুণগতমান রক্ষা করেই তৈরি ও বিক্রি করছে। তাই ক্রেতাদের ভিড় এখানে বেশি।
দেশের বাজারে লিচি, পুডিং, চানাচুর, মটরভাজা, নুডলস ও গুঁড়া মসলাসহ ৪০ পদের পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে হিফস এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি।
প্রতিষ্ঠানটির বিপণন শাখার ম্যানেজার আনিসুর রহমান জানান, দেশের বাজার ধরতে ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মতো মানসম্পন্ন পণ্যের সমাহার করেছে হিফস। এর বাইরে বিদেশি ক্রেতা ও আমদানিকারকদের আকৃষ্ট করতে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির পণ্যের প্রদর্শনীও চলছে।
হরেক পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছে ডেনিস, ইফাদ, এপি, ইনশা, অলিম্পিক, বনফুল-কিষাণ, ট্রপিকা মধু, এসএস ফুডস, দেশবন্ধু ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, গ্লোব সফট ড্রিংকস, সজীব গ্রুপ, আরএম এগ্রো, প্রাইম পুষ্টি বিডি, ইউরো ফুডস, বোম্বে সুইটস, এজি ফুডস, এলিন ফুডস, খন্দকার কনজ্যুমার ফুডস।
মিরপুর থেকে আসা দর্শনার্থী বেলালুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ভালো ভালো মানের পণ্য তৈরি করছে। মেলায় না আসলে আমি তো বুঝতামই না।’
ভারতের গুজরাট থেকে আসা নিশীথ নামের একজন বলেন, ‘মসলাজাতীয় পণ্য প্রসেসিং করার মেশিন নিয়ে আমরা মেলায় এসেছি। ঘুরতে ঘুরতে প্রাণ-এর স্টলটি চোখে পড়ে। নুডলস, কেক, বিস্কুট, মিষ্টি- কী নেই এই স্টলে।’
তিনি বলেন, ‘স্টলটি থেকে আমি এক কাপ নুডলস কিনলাম। স্টল থেকেই গরম পানি দেয়া হলো। কোনো ঝামেলা ছাড়াই খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেল নুডলস। স্বাদও অসাধারণ। আবার চানাচুরের মতোও নুডলস বিক্রি হচ্ছে। চানাচুরজাতীয় নুডলস আমি আগে কখনও খাইনি। এটি আসলেই খুবই চমৎকার।’
এমএ/এসআর/পিআর