ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

স্বপ্নডানা মেলছে আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল

সায়েম সাবু | নাটোর থেকে ফিরে | প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮

স্বপ্নকেই সারথি জানতেন। সেই স্বপ্নডানায় ভর করে দিগন্তজুড়ে স্বপ্নের বীজ বুনতেন। যে ডালে ভর করেছেন, সেই ডালে আরও শক্তি মিলেছে। শত বাধা আর প্রতিকূলতা পায়ে মাড়িয়ে সফলতার শিখরে উঠেছেন মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী। তিলে তিলে মেধা আর শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল।

দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে প্রাণ-আরএফএল-এর যাত্রা। লাখো প্রাণের সম্মিলনে প্রাণ-আরএফএল-এর পণ্য এখন বিশ্বের ১৪০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। মুনাফা ব্যবসার মুখ্য উদ্দেশ্য হলেও সামাজিক দায়কেও অন্যতম মনে করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে গ্রুপটি এখন আলোচনার কেন্দ্রে।

মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি নানা সেবামূলক কাজেও নিজেকে বিলিয়ে দিতেন মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে মিশে জীবনের গল্প বুনতেন। তেমনই এক গল্পের নাম ‘আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল’।

jagonews

স্বপ্ন ছিল নিজের জন্মস্থান নাটোরে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল করা। পত্তন দিয়েছিলেন নিজের হাতেই। এখন ডানা মিলছে অসহায় মানুষদের সেবা দিতে।

নাটোর রেলগেট থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে সাত কিলোমিটার যেতেই হাতের ডানে চোখে পড়বে বহুতল ভবনের এই হাসপাতাল। গোরস্থান বাজারসংলগ্ন হাসপাতালে এখন প্রায় সব ধরনের সেবা মিলছে। গ্রামীণ পরিবেশে এমন একটি হাসপাতালে যে কারও মন কাড়বে। ইতোমধ্যে নাটোর তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে এর ব্যাপক পরিচিতি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগীরা নামমাত্র ফি দিয়ে উন্নতমানের সেবা নিতে পারছেন। কম্পিউটারাইজড মাল্টি চ্যানেল ইসিজি, ডিজিটাল এক্স-রে, ডিজিটাল আলট্রাসনোগ্রাফিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে হাসপাতালটিতে। ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও রয়েছে।

৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালে বর্তমানে ২০ শয্যার অনুমোদন নেওয়া আছে। তবে হাসপাতালটিতে ১০০ শয্যা পর্যন্ত ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে ১৬ জন চিকিৎসক ও ১৪ জন নার্স রোগীদের প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনায় মোট ৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন।

jagonews

একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে এমন একটি হাসপাতাল নাটোরবাসীর কাছে রীতিমতো বিস্ময়ের। হাসপাতালের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় ভ্যানচালক আনছার আলীর সঙ্গে। বলেন, হাসপাতালের পাশের গ্রামেই বাড়ি। প্রাণ কোম্পানির মালিক মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী আমাদের জন্য এটি তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলেন। হাসপাতালটি তৈরির পর আমাদের দুঃখ কমেছে। এখন আর আমাদের বাইরে যেতে হয় না চিকিৎসার জন্য।

তিনি বলেন, স্বল্প টাকায় এখানে উন্নতমানের সেবা মিলছে। বেসরকারি হাসপাতালে গেলে গলা কাটা ফি দিতে হয়। আবার সরকারি হাসপাতালে নানা রকম হয়রানি। আর এই হাসপাতাল আমাদের কাছে নিজেদেরই প্রতিষ্ঠান মনে হয়। এখানকার সবাই আন্তরিক। এখন নাটোরের বাইরে থেকেও রোগীরা এখানে এসে সেবা নিচ্ছেন।

নাটোরের নলডাঙ্গা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন সত্তর বছরের জমেলা বেগম। বলেন, নানা সমস্যা শরীরে। ভালো হওয়ার আশায় এসেছি। একশ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। ভালো লাগছে। ভর্তির পরই ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। পরীক্ষা করতে দিয়েছেন। সবমিলে ভালো লাগছে।

jagonews

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের সহকারী ম্যানেজার এ এম জিনিহারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। ঘুরে ঘুরে দেখান হাসপাতালের নানা কার্যক্রম। বলেন, মূলত মানুষের কল্যাণের জন্যই এ হাসপাতাল। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। মাত্র একশ টাকা দিয়ে রোগীরা ভর্তি হতে পারেন। এখানে উন্নত মেশিনে মাত্র ৩৫০ টাকায় এক্স-রে করা যায়, যা অন্য কোথাও মিলবে না। বেডের ভাড়া ও সেবা বাবদ মাত্র ৭০ টাকা করে নেয়া হয় রোগীপ্রতি। তিনশ টাকায় আলট্রাসনোগ্রাফি করতে পারছেন রোগীরা। এই সুবিধা অন্য চিকিৎসা কেন্দ্রে আশা করা যায় না।

তিনি বলেন, প্রাণ-আরএফএল-এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর এই হাসপাতাল নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। গ্রামের অসহায় মানুষ স্বল্প মূল্যে সেবা নিতে পারবেন বলেই তার প্রচেষ্টা। আজ এখানে উন্নতমানের সেবা মিলছে। সেবার পরিধি বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। আরও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে আমরা সর্বদাই প্রস্তুত।

এএসএস/এমআরএম/আরআইপি

আরও পড়ুন