পোশাক শিল্পে ভর করে রফতানি আয়ে বড় উল্লম্ফন
>> প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ১৪.৭৫ শতাংশ
>> লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৬.৫৬ শতাংশ
>> বরাবরের মতো বড় অবদান তৈরি পোশাকের
রফতানিতে সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল এই অর্থবছর। দ্বিতীয় মাসে এসেই ধাক্কা খেলেও সেপ্টেম্বরে রফতানি আয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আয় হয়েছে ৯৯৪ কোটি ৯ লাখ ডলার। এই অর্থ প্রথম প্রান্তিকে মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৬১ কোটি ৬ লাখ ডলার বা ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও রফতানিতে বড় অবদান তৈরি পোশাক শিল্পের।
সোমবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অথর্বছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন পণ্য থেকে ৯৯৪ কোটি ৯ লাখ ডলার আয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৮৬৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর এ সময়ে ১২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার বেশি অর্থ আয় হয়েছে। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। এবার এই সময়ে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩৩ কোটি ডলার। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬১ কোটি ডলার বেশি আয় হলো।
রফতানিকারকরা বলছেন, রফতানি আয়ে সুখবর নিয়েই অর্থবছর শুরু হয়েছিল। কিন্তু আগস্টে কোরবানি ঈদের কারণে কয়েক দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি কাযর্ক্রম ব্যাহত হয়। সে কারণেই রফতানি কমেছিল। কিন্তু পরবর্তী মাসে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। ফলে রফতানিতে গতি এসেছে। পরের মাসগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা।
একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছে ৩১৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। লক্ষ্য ছিল ২৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এ মাসে আয় বেড়েছে ৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ২০৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে সময়ে মোট রফতানি আয়ে বরাবরের মতো তৈরি পোশাক খাত বড় অবদান রেখেছে। এই সময়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ৮১৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এই সময়ে লক্ষ্য ছিল ৭৮২ কোটি ২ লাখ ডলার। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে রফতানিতে আয় হয়েছিল ৭১৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। ফলে রফতানিতে খুব সন্তোষজনক কিছু অর্জন করা যাচ্ছে না। রফতানি আয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চেয়েও এগিয়ে গেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি।
তৈরি পোশাকে এই আয়ের মধ্যে নিট পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৩৮৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। উভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। মূলত, তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার কারণেই সেপ্টেম্বরে সার্বিক রফতানি আয় বেড়েছে।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শুরুটা খুব ভালো হয়েছিল। মাঝে একটু সমস্যা হলেও আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে এবং ক্রয়াদেশ বাড়ছে। এর কারণ আছে। আমরা, কারখানাগুলোর উন্নয়নে পোশাক শিল্প মালিকরা গত কয়েক বছরে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছি। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।
তবে ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার ব্যাপক দরপতন করায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বলে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বরে সময়ে হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। চা রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ২১ কোটি ডলার। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ওষুধ রফতানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া গত তিন মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে গ্লাস ও জাহাজ রফতানিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, সব রফতানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, তাই সার্বিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। ফলে পোশাক শিল্প নিদারুণ চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের শর্তানুযায়ী, এ শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ৯৭ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে কৃষিপণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ২৯ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৭১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত তিন মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ সময় আয় এসেছে ২০ কোটি ২৯ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
এমএ/জেডএ/পিআর