দিনে ১২ লাখ লিটার পানির শোধন প্রাণ এ্যাগ্রোতে
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চারটি শোধনাগারের মাধ্যমে প্রাণ এ্যাগ্রো ও নাটোর এ্যাগ্রো লিমিটেডের কারখানা থেকে নিঃসৃত ১২ লাখ লিটার দূষিত পানি প্রতিদিন পরিশোধিত হচ্ছে। কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ নিয়ে যখন মানবজাতি হোঁচট খাচ্ছে, তখন বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিষাক্ত পানি শোধন করে বিশেষ নজির স্থাপন করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’।
শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখার জন্য প্রাণ কোম্পানিকে বিশেষ সনদও প্রদান করেছে পরিবেশ অধিদফতর ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
প্রাণ এ্যাগ্রো লিমিটেডের বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত পানির এক ফোটাও অপরিশোধিত অবস্থায় বাইরে ফেলা হয় না। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক ও গুরুত্ব দেয়াই হচ্ছে কোম্পানির নীতি। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় একাধিক সনদও মিলেছে।’
‘পরিবেশ রক্ষা আগে, উৎপাদন পরে’- এই নীতি অবলম্বন করায় আমাদের ফ্যাক্টরির পানি ও বর্জ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছি, বলেন তিনি।
সরেজমিন নাটোরের একডালায় অবস্থিত প্রাণের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল ফ্যাক্টরির মধ্যে পানি শোধনাগারগুলোও যেন একেকটি ফ্যাক্টরি। কয়েকটি স্তরে পরিশোধিত হয়ে পানি গিয়ে পড়ছে পাশের নারদ নদে। মূলত প্রাণ ফ্যাক্টরি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার স্বচ্ছ আর বর্জ্যমুক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় সচল রয়েছে নারদ নদ।
আরও পড়ুন >> হাজার কৃষকের সফল গল্পের কারিগর প্রাণ এ্যাগ্রো
নাটোরের একডালার বাসিন্দা আফসার আলী বলেন, একসময় এখানে নৌকা চলত। দখল আর পানি স্বল্পতার কারণে প্রাণ হারায় নারদ। প্রাণ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর শঙ্কা ছিল, এটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আমাদের সেই শঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফ্যাক্টরির পানি নদীতে পড়লেই দূষিত হয় না। প্রাণ ফ্যাক্টরির পরিশোধিত পানির কারণে মৃতপ্রায় নারদে আজ গতি ফিরেছে। এখন কম-বেশি মাছও মিলছে নারদে।
ফ্যাক্টরির উপ-সহকারী ব্যবস্থাপক আতাহার আলী ঘুরে দেখান তাদের ইটিপির কার্যক্রম।
ফ্যাক্টরির ব্যবহৃত পানি প্রথমে ইনলেট দিয়ে প্রবেশের পর নেট দিয়ে ছেঁকে বড় বড় সলিড আলাদা করা হয়। এরপর টিপিআই-এর মাধ্যমে ওয়েলগ্রিজ দিয়ে আবারও বর্জ্যগুলো আলাদা করা হয়। খানিক বর্জ্যমুক্ত দূষিত পানি ইকুলাইজেশন ট্যাংকে আনা হয় এবং এখানেই ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য নিউটেশন হিসেবে ইউরিয়া ও টিএসপি ব্যবহারের মাধ্যমে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
এরপর ডাইজেস্টার ফাইন স্ক্রিনের মাধ্যমে ফের ছোট সলিডগুলো আলাদা করা হয় এবং বড় সলিডগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এখানে সলিডগুলোর সিওডি (কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) ও বিওডি (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ার পরে প্রি-অ্যারেশনে পানি থেকে ক্ষতিকর গ্যাস বের করা হয়। অ্যারেশন-১ এনে পানিতে ফের বাতাসযুক্ত করা হয়। এরপর সেকেন্ডারি ক্যালোরিফায়ার-১-এর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া স্যাটেল ডাউনের পর উপরের পরিষ্কার পানি অ্যারেশন-২ এ চলে যায়।
পানি অ্যারেশন-২-তে চলে আসার পর ফের বাতাসযুক্ত করা হয়। অন্যদিকে এখানেই এএসপি (activated sludge process) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফের সিওডি ও বিওডি ৫৫ ভাগ কমিয়ে আনা হয়। সর্বশেষ সেকেন্ডারি ক্যালোরিফায়ার-২-এর মাধ্যমে পানি আদর্শ মানে আসে। এই ধাপ থেকে পানি নিয়ে নিয়মিত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পানির পরিশীলিত গুণাগুণ মিললেই বাইরে ফেলা হয়।
ইটিপি ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান আরও বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত পরীক্ষার মধ্যে থাকি। নির্দিষ্ট মাত্রায় পানির গুণাগুণ না আসলে বাইরে ফেলি না। ফ্যাক্টরিতে চারটি পরিশোধনাগার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ২০ লাখ পানির শোধন সম্ভব। যদিও আমরা এখন ১০ থেকে ১২ লাখ লিটার পানি শোধন করছি। তবে ফ্যাক্টরির পরিধি বাড়ছে বলে, ইটিপির পরিধিও বাড়ছে এবং আরও উন্নতমানের প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
এএসএস/এমএআর/আরআইপি