ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

পুনর্নির্ধারিত হলো সাধারণ বীমার ব্যবস্থাপনা ব্যয়

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১০:৩৯ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৮

প্রায় দেড় বছর চিঠি চালাচালির পর দেশে ব্যবসা করা সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় পুনর্নির্ধারিত করেছে সরকার। এ জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী বিধিমালা, ২০১৮’ জারি করা হয়।

নতুন বীমা আইন ২০১০ কার্যকর হওয়ার পর ২০১৬ সালের জুলাই মাসে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারণে প্রবিধানমালা জারি করে সরকার। ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা-২০১৬’ কার্যকর হওয়ার পর ওই বছরই ১৮টি কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

এরপর প্রবিধানমালায় নির্ধারিত ব্যয়ের সীমা নিয়ে আপত্তি তুলে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে নিরীক্ষা কর্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন আইডিআরএকে। পাশাপাশি বাকি কোম্পানিগুলোর পক্ষে নিরীক্ষা কর্যক্রম বন্ধ করতে আইডিআরএকে অনুরোধ জানায় বীমা মালিক ও নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ বীমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিধিমালা সংশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরীর সই করা একটি নির্দেশনা পাঠানো হয় আইডিআরএতে।

এতে বলা হয়, ‘নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণী প্রবিধানমালা-২০১৬’ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে। আগামী ৩১ মার্চ (২০১৭ সালের) সংশোধনী চূড়ান্ত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বীমা খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে জারিকৃত প্রবিধানমালাটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সাবধানতা অবলম্বন করবে।’

এরপর দীর্ঘ দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় পুনর্নির্ধারিত সংক্রান্ত বিধিমালা জারি করা হয়। গেজেট আকারে প্রকাশিত এ বিধিমালার ৩(১) ধারায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার নির্ধারণ করে একটি টেবিল উপস্থাপন করা হয়েছে।

ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পুনর্নির্ধারিত হার

১. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১৫ কোটি টাকার ওপর শতকরা ৩৫ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

২. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১৫ কোটির পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ৩৩ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ২৫ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৩. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের দ্বিতীয় ১৫ কোটির পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ৩২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ২৪ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৪. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের তৃতীয় পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ৩০ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৫. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের চতুর্থ পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ২৮ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ২০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৬. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের পঞ্চম পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ২৬ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ১৮ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৭. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ষষ্ঠ পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ২৪ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ১৭ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

৮. অগ্নি ও অন্যান্য বীমার গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের সপ্তম পরবর্তী ১৫ কোটি টাকার ২২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ১৬ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

প্রবিধানমালার ৩ (২) ধারায় বলা হয়, ‘উপ-প্রবিধান (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বীমাকারী তাহার বীমা ব্যবসার প্রথম ১০ (দশ) বৎসরে বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিশন খরচ বা পারিশ্রমিকসহ যে কোনো পঞ্জিকা বৎসরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় হিসাবে নিম্নরূপ অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে।’

যথা- (ক) প্রথম বছরে তার পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অর্থ (খ) পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বছরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ।

(গ) পরবর্তী ৩ বছরের প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে মোট পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের অর্থ বা সংশ্লিষ্ট বৎসরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত পলিসির গ্রস প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের মধ্যে যাহা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ।

(ঘ) পরবর্তী ৩ বছরেরর প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পরিশোধিত মূলধনের ওপর অর্জিত সুদের তিন-চতুর্থাংশ অর্থ বা ওই বছরে সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের দুই দশমিক পাঁচ শূন্য শতাংশ অর্থের মধ্যে যাহা কম হয় সেই পরিমাণ অর্থ।

আর ৩(৩) ধারায় বলা হয়, ‘যেসব বীমাকারীর ব্যবসার প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত তাদের প্রধান কার্যালয়ের ব্যয়ের একটি যথার্থ অংশ ব্যবস্থাপনা ব্যয় সীমাভুক্ত হবে এবং উহা সরাসরি ও গৃহীত পুনঃবীমা ব্যবসাসহ এবং প্রদত্ত পুনঃবীমা প্রিমিয়াম ব্যতিরেকে কোনোক্রমেই ওই বছরে বাংলাদেশে অর্জিত মোট প্রিমিয়ামের ৫ শতাংশের অধিক হবে না।’

যা ছিল ২০১৬ সালের প্রবিধানমালায়

এক. সরাসরি বাংলাদেশে ইস্যুকৃত বীমাকারীর অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের প্রথম ১ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩৫ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

দুই. ৫কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩৩ শতাংশ এবং নৌ বীমার ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

তিন. ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

চার. ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ৩০ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

পাঁচ. ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৮ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

ছয়. ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৬ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

সাত. ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটি টাকা পর্যন্ত অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২৪ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

আট. ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে তদূর্ধ্ব মোট গ্রস প্রিমিয়াম আয়ের ওপর অগ্নি ও অন্যান্য বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের ওপর শতকরা ২২ শতাংশ এবং নৌ-বীমার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারবে।

প্রবিধানমালার ৩(২) এবং ৩(৩) ধারায় যা ছিল পুনর্নির্ধারিত বিধিমালায় তাই রাখা হয়েছে।

এমএএস/জেডএ/জেএইচ

আরও পড়ুন