জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ : বিশ্বব্যাংক
#খেলাপি ঋণের কারণে আগামী বাজেটে চাপ আসবে
#প্রয়োজন আর্থিক খাতে সংস্কার
#আমরা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের দিকে যাচ্ছি : জিল্লুর
আর্থিকখাতে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে বহুমুখী সংস্থা বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে এজন্য আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে। তাহলে গত কয়েক বছরের ন্যয় আগামীতেও ভালো প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অবস্থার উপর তৈরি করা ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রফতানি ও রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারায় বছর শেষে এই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক গ্রোথ এখন ভালো অবস্থানে আছে। আমাদের জিডিপির পরিমাণ ৭ বা ৬ শতাংশ বড় কথা নয়, আমাদের গ্রোথ ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নগামী, এটা ধরে রাখতে হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন তুলে ধরে জাহিদ হোসেন জানান, দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে এর পরিমাণ ৪৮ শতাংশ। এতে বাংলাদেশে মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
খেলাপি ঋণের কারণে আগামী বাজেটে চাপ আসবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক। একইসঙ্গে বাজেটে চাপ মোকাবেলায় আর্থিক খাত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো ও রাজস্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে রেমিটেন্স ধরে রাখতে হবে, যেটা গত কয়েক বছর কিছুটা কমে গেছে। তাছাড়া রফতানি ও ব্যক্তি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে তা দূর করতে হবে।
সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের শেষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এবার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ঢাকায় এ সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান ছাড়াও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
চিমিও ফান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব। এজন্য আর্থিক খাতের বেশ কিছু ইস্যুতে সংস্কার আনা প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেন, আমাদের দেশে মেগা প্রকল্প সব ঋণের ওপর নির্ভরশীল, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। এখন বিলিয়নের হিসাব চলছে কিন্তু আমরা চাই সবুজের সঙ্গে থাকতে, লালের সঙ্গে না। আমরা যেন অন্য দেশের মতো ঋণগ্রস্ত হয়ে না পড়ি এ বিষয়ে সব থেকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিটি প্রকল্পে শুরু থেকে যা ব্যয় দেখানো হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুগুণে এর বাজেট বেড়ে যায়। আমরা এখন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের দিকে যাচ্ছি। যে কোনো প্রকল্পেই আমাদের ঋণ না নিয়ে এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করতে হবে। তার ভালো-খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমরা মধ্যম আয়ের কথা বলছি, অথচ আমাদের দেশে এখনও ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দরিদ্র। তাদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। মানুষ দেশের বাইরে যায় কিন্তু রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে এ বিষয়টি দেখা প্রয়োজন।
এমএ/এসএইচএস/পিআর