ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

পাটপণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারে গুরুত্বারোপ

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ০৬:৪৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এই সময়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি অমীমাংসিত বেশকিছু ইস্যু নিয়ে সরকার টু সরকার পর্যায়ে আলোচনা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলটি আগামী ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফল করবেন। এ সময় তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব সুভাশীষ বসু জাগো নিউজকে বলেন, ‘অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক (বাজার দখলে কম দামে পণ্য ছাড়ার শাস্তিস্বরূপ শুল্ক) প্রত্যাহার, বর্ডার হাট, বেনাপোল স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং টেকনোলজি ট্রান্সফারের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এসব বিষয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

‘ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে ভারত। এজন্য ভারতে তৈরি পোশাকপণ্যের রফতানি বেড়েছে। এ সুবিধা নিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্যের রফতানি বাড়ানো সম্ভব।’ বেসরকারি খাতকে এ বিষয়ে আরও এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপের সিদ্ধান্ত এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ব্যবধান আরও বাড়বে।’

বাংলাদেশ যখন ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নে কাজ করছে সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের ধারাকে ব্যাহত করবে বলে ডিসিসিআই মনে করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি করা পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানায় ডিসিসিআই।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত আট বছরে প্রথম ও দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি চুক্তির আওতায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। তৃতীয় এলওসির আওতায় গত বছর আরও সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারত থেকে আট বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে।

ওই অর্থ দিয়ে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে রফতানি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব অর্থছাড়ে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থছাড়ের বিষয়ে গাতি আনার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তার এই সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে চান। মূলত বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেসব বাধা ও সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে এবার আলোচনা হবে। আশা করা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের উদ্যোগ থাকবে এবারের সফরে।

জানা গেছে, ভারতীয় ঋণে দেশের বড় ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এগুলো হচ্ছে- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত দ্বৈতগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নয়নকাজ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ, মংলা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মোল্লারহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেনের সড়ক নির্মাণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাতি সরবরাহ প্রকল্প।

এদিকে এলওসি চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে এক শতাংশ সুদে আগামী ২০ বছরে ঋণের টাকা পরিশোধের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ফলে বড় অঙ্কের ঋণের এই টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া গেলে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দ্রুত বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি দূর হওয়ার সুযোগও তৈরি হবে।

এছাড়া তিনটি বিষয় সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা গৃহীত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- আঞ্চলিক যোগাযোগ, রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি। আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির আওতায় ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটান ও নেপালে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বাংলাদেশ। একইভাবে ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারবে। এজন্য বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট হারে মাশুল প্রদান করবে ভারত।

ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা দূর হবে রফতানি বাণিজ্যের মাধ্যমে। একই সঙ্গে জ্বালানি ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে ভারতের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতোমধ্যে ১০টি বর্ডার হাট চালু করতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তে চারটি বর্ডার হাট চালু হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যে আরও ছয়টি বর্ডার হাট চালু হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ প্রভুর এই সফরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জমি বরাদ্দের বিষয়ে আলোচনা হবে। চলতি বছরের মে মাসে ভারত সফরের সময় এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনাকালে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়টিও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ বছর একাধিকবার ভারত সফর করেন। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সফরে সম্ভাব্য আরও কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেক্সটেক ইন্ডিয়া শীর্ষক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা নিয়ে আলোচনা, দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে সেমিনারে অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে কর, কর্মসংস্থান ও শ্রমসংক্রান্ত নিয়মনীতি নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) আলোচনা।

এমইউএইচ/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন