শর্তপূরণ করেও শোকজ খেল তিন কোম্পানি
পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণে ব্যর্থতার কারণ দেখিয়ে ১৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানিকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে শোকজ করা এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করা তিনটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এর মধ্যে দুটিই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্টক এক্সচেঞ্জকেও পরিশোধিত মূলধনের তথ্য দিয়েছে।
পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করার পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একাধিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে আইডিআরএ’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বীমা আইন ২০১০-এর ২১ ধারার বিধান এবং তফসিল-১ মোতাবেক সাধারণ বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হবে সর্বনিম্ন ৪০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধনের এই শর্ত কেন মানা হয়নি তা জানতে চেয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১১টিসহ মোট ১৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে আইডিআরএ।
চিঠি দেয়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, এবং প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স।
এর মধ্যে- নিটল ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকা বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরদিকে শোকজ করা অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, সিকদার ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স এবং মেঘনা ইন্স্যুরেন্স।
এর মধ্যে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার ওপরে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তালুকদার মো. জাকারিয়া হুসাইন।
তিনি বলন, আইডিআরএ থেকে পরিশোধিত মূলধনের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। তবে আমাদের কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা হয়ে গেছে। ওখানে (আইডিআরএ) একটা রঙ (ভুল) ইনফরমেশন আছে। তবে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু আইডিআরএকে আমরা বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।
এদিকে আইডিআরএ বলছে, ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে আইডিআরএ’কে বীমা কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সে ৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং নিটল ইন্স্যুরেন্সে ৩৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে নিটল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ৪০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করেছি। এ তথ্য আইডিআরএ এবং স্টক এক্সচেঞ্জকে দেয়া হয়েছে। এরপরও কেন আইডিআরএ থেকে আমাদের নোটিশ দেয়া হলো, সেটি আমরা বলতে পারবো না। এটা আইডিআরএ ভালো বলতে পারবে।
আইডিআরএ থেকে শোকজ করা বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে- প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সে ২৯ কোটি ৭০ লাখ, রিপাবলিকের ৩৫ কোটি ২ লাখ, সেনাকল্যাণের ২৪ কোটি, সিকদারের ২৪ কোটি, সোনার বাংলার ৩৪ কোটি ৩৪ লাখ, সাউথ এশিয়ার ৬ কোটি, স্ট্যান্ডার্ডের ৩ কোটি ৫৮ লাখ, গ্লোবালের ৩৫ কোটি ৩ লাখ, ইসলামী কমার্শিয়ালের ২৬ কোটি ৮২ লাখ, জনতার ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ, মেঘনার ৬ কোটি ৯০ লাখ, প্যারামাউন্টের ২৮ কোটি ৭৬ লাখ এবং ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এই পরিশোধিত মূলধনের হিসাব আইডিআরএ'র।
তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের ৩৯ কোটি ৪০ লাখ, সোনার বাংলার ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ, স্ট্যান্ডার্ডের ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ, গ্লোবালের ৩৬ কোটি ৭৮ লাখ, প্যারামাউন্টের ৩১ কোটি ৬৪ লাখ এবং ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।
কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. এম মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, যে কোম্পানিগুলো পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করেনি আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি। আমরা চাই, সব কোম্পানিই পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করুক। এ বিষয়ে সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে।
দীর্ঘদিন ব্যবসা করার পরও পরিশোধিত মূলধনের শর্তপূরণ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, আমাদের কোম্পানি যেসময় অনুমোদন পায় সেসময় পরিশোধিত মূলধনের শর্ত ছিল ২০ কোটি টাকা। এখন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আইডিআরএ পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা করতে বলেছে। এটা তো একদিনে করা সম্ভব না। আমরা ধাপে ধাপে পরিশোধিত মূলধন বাড়াবো।
এমএএস/জেডএ/জেআইএম