একটি জায়গায় বাংলাদেশ পিছিয়ে : বাণিজ্যমন্ত্রী
বর্তমানে ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি জায়গায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে; তা হলো ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা ব্যবসায় সহজ করার সূচকে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে আগামীতে ক্ষমতায় আনলে এটি কমিয়ে ১০০-তে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এফবিসিসিআই আয়োজিত 'পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর পোস্ট এলডিসি গ্রাজুয়েশন, বিজনেস প্রেসপেকটিভ' শীর্ষক সংলাপে তিনি একথা বলেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের আবারও নির্বাচিত করেন। আমরা আবারও ক্ষমতায় আসি। দেখবেন ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশ ১০০-এর নিচে চলে আসবে।
ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য সহজীকরণ সূচক। বিশ্ব ব্যাংকের সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭-তম। যে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ যতো সহজ বা ভালো তালিকায় সেদেশ ততো এগিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। কারণ বর্তমান সরকার ব্যবসা বান্ধব, শ্রমিক বান্ধব এবং জনবান্ধব। আগামীতে আমরা ক্ষমতায় আসলে দেশের অগ্রগতি থেমে থাকবে না। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, সেভাবেই এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কল্যাণে আজকের প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা এসডিজির শর্ত পরিপালনে কাজ করছি। এটি অর্জনে নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য সরকারের প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১০টি নারী উদ্যোক্তাদের দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। এছাড়া কোনো নারী উদ্যোক্তা যদি এককভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল নিতে চায় তাহলে তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
বর্তমান তৈরি পোশাক খাতের প্রধান কাঁচামাল তুলা চাহিদা মেটাতে আফ্রিকায় তুলা চাষে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি গরিবের পকেট কেটে নেয়। অথচ মাথাপিচু আয় বাড়া সত্ত্বেও দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে ধরে রাখা গেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থিনীতিতে যোগ হয়েছে। অর্থনীতিতে এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন।
তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্য পূরণে কৃষির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। প্রসার ঘটাতে হবে যান্ত্রিকীকরণের। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পুঁজিবাজার, বীমা ও বন্ড মার্কেটের উন্নতি হতে হবে সমানতালে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সবুজ উন্নয়নের বিকল্প নেই।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়ানো দরকার। আর্থিক নীতিতে সংস্কার আনতে হবে। বাংলাদেশ প্রচুর সম্ভাবনার দেশ। ঠিক কী ধরনের সম্ভাবনায় ডুবে আছি তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানি না- বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, অনেকে বলে মধ্য আয়ের দেশ হলে অর্থনৈতিক সাহায্য কমে যাবে। এখন আমরা এখন অন্যের সাহায্যে নির্ভর নয়। নিজেদের অর্থায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪২তম অর্থনৈতিক দেশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ২৮তম ও ২০৫০ সালে ২৩তম অর্থনৈতিক দেশে উন্নীত হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে সিংহভাগ করছে বেসরকারি খাত। এখন যদি এ খাতে বিশেষ অগ্রধিকার দেয়া না হয় তাহলে এসডিজিতে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে যাচ্ছি এ থেকে পিছিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এসময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/জেএইচ/জেআইএম