ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

দুরবস্থায় অধিকাংশ ব্যাংক

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৮:০২ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৮

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে ১৪টি ব্যাংক। মুনাফা কমেছে ১৫টি ব্যাংকের। সম্পদ কমেছে ছয়টির।

লোকসানের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে একটি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের প্রথমার্ধের (জানুয়ারি-জুন) আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকের এই দুরবস্থা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ঠিকমতো যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকগুলো এমন সংকটের মধ্যে পড়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে এবং কমছে আমানতের প্রবৃদ্ধি। সার্বিকভাবে ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে নগদ অর্থ সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবি, ঢাকা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া।

এর মধ্যে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি চলতি বছরে নতুন করে নগদ অর্থ সংকটে পড়েছে। বাকি ব্যাংকগুলোতে গত বছরের প্রথমার্ধেও নগদ অর্থ সংকট ছিল।

চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুন মাস শেষে ১৪টি ব্যাংকের পরিচালন নগদ প্রবাহ বা অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ার অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হওয়া। ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিতরণ হওয়া ঋণ প্রত্যাশা অনুযায়ী আদায় না হওয়ায় পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

জুন মাস শেষে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে ঢাকা ব্যাংক। জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৬ টাকা ১৩ পয়সা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৩ টাকা ৭৬ পয়সা।

এরপর রয়েছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০ টাকা ৯০ পয়সা। ঋণাত্মক ১০ টাকা ৬২ পয়সা শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ নিয়ে এর পরে রয়েছে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার কোনো কারণ নেই। আর ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হলে তো ব্যাংক চলতে পারবে না। এখানে নিশ্চিত কোনো সমস্যা আছে।

এবি ব্যাংকের প্রধান অর্থ-কর্মকর্তা মহাদেব সরকার সুমন বলেন, ব্যাংকের ডিপোজিট (আমানত) কম আসলে এবং ঋণ বিতরণ বেশি হলে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। আমাদের ডিপোজিট কম এসেছে, এ কারণে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ব্যাংকের চিত্র :

ব্যাংকের নাম

শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ

২০১৮ সালের জানুয়ারি-জুন

২০১৭ সালের জানুয়ারি-জুন

এবি ব্যাংক

ঋণাত্মক ১০ টাকা ৯০ পয়সা

ঋণাত্মক ১১ টাকা ৭৪ পয়সা

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

ঋণাত্মক ৭ টাকা ৯৬ পয়সা

৪ টাকা ৩৪ পয়সা

ব্যাংক এশিয়া

ঋণাত্মক ৪ টাকা ১২ পয়সা

ঋণাত্মক ৬ টাকা ৫৪ পয়সা

ঢাকা ব্যাংক

ঋণাত্মক ১৬ টাকা ১৩ পয়সা

ঋণাত্মক ৯ টাকা ২৬ পয়সা

ডাচ বাংলা

ঋণাত্মক ১৩ টাকা ৭৬ পয়সা

৫৭ টাকা ৪১ পয়সা

এক্সিম

ঋণাত্মক ৭ টাকা ৮৬ পয়সা

২৯ পয়সা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

ঋণাত্মক ৩৬ পয়সা

ঋণাত্মক ৮ টাকা ৮৬ পয়সা

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক

ঋণাত্মক ৩৭ পয়সা

ঋণাত্মক ৩৩ পয়সা

ইসলামী ব্যাংক

ঋণাত্মক ১০ টাকা ৬২ পয়সা

ঋণাত্মক ১৪ টাকা ৬ পয়সা

যমুনা

ঋণাত্মক ৪ টাকা ৯৩ পয়সা

ঋণাত্মক ১ টাকা ৬৮ পয়সা

এমটিবি

ঋণাত্মক ৩ টাকা ২ পয়সা

ঋণাত্মক ৯ টাকা ১৮ পয়সা

এনবিএল

ঋণাত্মক ২ টাকা ৭৫ পয়সা

১ টাকা ৭৫ পয়সা

এসআইবিএল

ঋণাত্মক ১ টাকা ৩২ পয়সা

৩ টাকা ২১ পয়সা

ইউসিবি

ঋণাত্মক ৯ টাকা ৪২ পয়সা

২ টাকা ৫৫ পয়সা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালন নগদ প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর। এটি প্রতিষ্ঠানের তারল্যের চিত্র তুলে ধরে। পরিচালন নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হলে সেই প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হয়। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে প্রতিষ্ঠানের সংকট বাড়তে থাকে। যে প্রতিষ্ঠানের পরিচালন নগদ প্রবাহ যত বেশি ঋণাত্মক, ওই ব্যাংকের সংকট তত বেশি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ নেতিবাচক হওয়ার মানে হলো অবশ্যই ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে একজন সিনিয়র ব্যাংকার চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার মাত্র ১০ শতাংশ যাচাই-বাছাই করে দেয়া হয়। বাকি ৯০ শতাংশ ঋণ দেয়া হয় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধসহ ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে। এভাবে ঋণ দিলে তো সমস্যা হবেই।’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি ব্যাংকের অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে গেলে বুঝতে হবে, ওই ব্যাংকের নগদ অর্থের সংকট দেখা দিতে পারে। যে প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহে ঋণাত্মকের পরিমাণ যত বেশি হবে, ওই প্রতিষ্ঠানের সংকটের মাত্রা তত বেশি হবে। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের জন্য ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলে, তা বড় ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু ক্যাশ ফ্লোর ঋণাত্মক অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তার বড় একটি অংশ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্য যদি দ্রুত সমাধান করা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এতে ব্যাংকের মুনাফায় ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে। আবার মুনাফার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যাংক আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করতে পারে। এতে সংকট আরও বাড়বে। কারণ আগ্রাসী ঋণ দিলে খেলাপি ঋণও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকের কাজই হলো তার‌ল্য নিশ্চিত করা। কোনো কারণে ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে আমানতকারীরা সমস্যার মধ্যে পড়বেন। গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা ওঠাতে গেলে সঠিক সময়ে টাকা পাবেন না। এ অবস্থা সৃষ্টি হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। সাধারণ মানুষ ব্যাংকের ওপর থেকে পুরোপুরি আস্থা হারাবেন। তখন সংকট আরও বাড়বে।’

এদিকে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমেছে ১৫টি ব্যাংকের। এ তালিকায় রয়েছে- এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ও উত্তরা ব্যাংক। এর মধ্যে এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউসিবি নগদ অর্থ সংকটেও রয়েছে।

আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে ওয়ান ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ছয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৪০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ৮১ পয়সা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৪২ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ পয়সায়। ৪৪ পয়সা থেকে কমে শেয়ারপ্রতি ১৩ পয়সা মুনাফা করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এক্সিম ব্যাংক।

ওয়ান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফখরুল আলম বলেন, চলতি বছরের প্রথমার্ধে আমরা ভালো মুনাফা করতে পারিনি। যে কারণে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমে গেছে। তবে আমরা আশাকরছি শিগগির এ অবস্থার উন্নতি হবে।

মুনাফা কমে যাওয়া ব্যাংকের চিত্র :

ব্যাংকের নাম

শেয়ারপ্রতি মুনাফা

২০১৮ সালের জানুয়ারি-জুন

২০১৭ সালের জানুয়ারি-জুন

এবি ব্যাংক

৩৯ পয়সা

৭৯ পয়সা

আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

৪৩ পয়সা

১ টাকা ১৪ পয়সা

সিটি ব্যাংক

১ টাকা ৫১ পয়সা

২ টাকা ১৮ পয়সা

ইবিএল

১ টাকা ৮৩ পয়সা

২ টাকা ৩১ পয়সা

এক্সিম

১৩ পয়সা

৪৪ পয়সা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

৫০ পয়সা

৮১ পয়সা

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক

ঋণাত্মক ৩১ পয়সা

ঋণাত্মক ২৭ পয়সা

আইএফআইসি

৪৩ পয়সা

৬২ পয়সা

ওয়ান ব্যাংক

৪০ পয়সা

১ টাকা ৮১ পয়সা

প্রাইম ব্যাংক

৭০ পয়সা

৭৮ পয়সা

রূপালী ব্যাংক

৪৪ পয়সা

৬৬ পয়সা

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক

১০ পয়সা

৪২ পয়সা

ট্রাস্ট ব্যাংক

১ টাকা ৮ পয়সা

২ টাকা ১১ পয়সা

ইউসিবি

১ টাকা ৫ পয়সা

১ টাকা ২৫ পয়সা

উত্তরা ব্যাংক

১ টাকা ৩৮ পয়সা

২ টাকা ৩ পয়সা

প্রবলেম ব্যাংক হিসেবে পরিচিত আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের নগদ অর্থ সংকট ও লোকসানের পাশাপাশি সম্পদমূল্যও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদের মূল্য ১৬ টাকা ৫ পয়সা ঋণাত্মক। আগের বছর একই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ ছিল ঋণাত্মক ১৫ টাকা ৩৯ পয়সা। অর্থাৎ সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের তুলনায় দায় বেড়েই চলেছে।

এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আগের বছরের তুলনায় পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদের মূল্য কমেছে। সম্পদের মূল্য কমে যাওয়া ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে- এবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

এর মধ্যে এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সম্পদের মূল্য জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা দুই পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩২ টাকা ৪৯ পয়সা। সিটি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সম্পদের মূল্য ২৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৭৬ পয়সা। ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৮ টাকা ৬১ পয়সা থেকে কমে ১৭ টাকা ৬৭ পয়সা, ওয়ান ব্যাংকের ১৮ টাকা ৫৫ পয়সা থেকে কমে ১৭ টাকা ৫১ পয়সা এবং পূবালী ব্যাংকের ২৬ টাকা ৫১ পয়সা থেকে কমে ২৫ টাকা ৭৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাচ্ছে। ফলে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থাও কমছে। ব্যাংক খাতের এই অবস্থা দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এবং উদ্বেগও বাড়াচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষণ আমরা দেখছি না।

তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের মূলধনের ৩০ শতাংশের ওপরে রয়েছে ব্যাংক খাত। মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতের শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমলে তা অন্য খাতের ওপরও প্রভাব ফেলে। সুতরাং ব্যাংক খাতের দুরবস্থা শেয়াবাজারের জন্য কিছুতেই ভালো সংবাদ নয়।

অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে। পরিচালকদের অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেয়াসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাত একপ্রকার দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়া, মুনাফা কমে যাওয়া তারই ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাত ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। কোনো কারণে ব্যাংক খাত সংকটের মধ্যে পড়লে সমগ্র অর্থনীতিতে সংকট দেখা দেবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকের মুনাফা কমা বা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার কারণ আমি বলতে পারবো না। তবে কোন ব্যাংক যদি আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের আশ্রয় নেয় তাহলে আমরা ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

ডিএসইর সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে সুদের হার বেড়ে গেছে। সুদের হার বাড়ার কারণে শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের ব্যবসায় ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করতে পারেনি। এসব বিষয় বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এমএএস/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন