নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমছে না
>> জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের কার্যক্রম অটোমেশনে
>> ৫০ হাজার টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে চেকে পেমেন্ট
>> সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করতে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেবে। তবে রিপোর্ট যাই আসুক, আগামী নির্বাচনের আগে সঞ্চপত্রের সুদহার কমছে না।
মঙ্গলবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংক আমাদনতে ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হচ্ছে। তাই ব্যাংক আমানতে সুদহার থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদহার পার্থক্য অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সুদহার কমাতে চায় সরকার। এ জন্য অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যান্তরীণ সম্পদ বিভাগের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেবে। তবে রিপোর্ট যাই আসুক, আগামী নির্বাচনের আগে সঞ্চপত্রের সুদহার কমানো হবে না।
কমিটির প্রধান কাকে করা হয়েছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা অর্থ বিভাগই ঠিক করবে।
মুহিত বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ক্ষেত্রে আমরা বাজার রেট থেকে ১ বা দেড় শতাংশ বেশি রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন এটা আছে ১১ প্লাস, যা ব্যাংকের আমানতের তুলায় অনেক বেশি। সুতরাং এটাকে একটু কমাতে হবে। তবে পরবর্তী সরকার সঞ্চয়পত্র কমানোর বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে। আশা করছি, আমরা আবারও সরকারে আসবো। আমরাই এটি বাস্তবায়ন করবো।
তিনি আরও বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকেই জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধদফতরের সব কার্যক্রম অটোমেসন (অনলাইন) হয়ে যাবে। এ অটোমেশনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে লিংক থাকবে। তখন সঞ্চয়পত্রে লেনদেন পেপারলেসভাবে হবে। তাই কেউ সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনছে কি না সেটি সহজেই ধরা পড়বে। অটোমেশন হয়ে গেলে কার সঞ্চয়পত্র আছে তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর তথ্য পাওয়া যাবে।
সঞ্চপত্রে কালো টাকা বিনিয়োগরোধে ৫০ হাজার টাকার বেশি কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে তাকে চেকের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে হবে। কারণ, ব্যাংকে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোথা থেকে টাকা আসলো সেটা জিজ্ঞাসা করা হয় বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, ‘বর্তমানে অনেক ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। তাই আমরা কমিটিকে বলেছি, তোমরা এ জিনিসটা স্টাডি করো। কমিটি শুধু সুদহারই নয় অনেক ধরনের সঞ্চয়পত্র কমিয়ে যৌক্তিকীকরণও করবে। ব্যাংকিং সিস্টেমে যখন সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতো না তথন পোস্ট অফিস বিক্রি করতো। সার্বিকভাবে সঞ্চয়পত্র কার্যক্রমটাকে রিফর্ম করার সুপারিশ দেবে কমিটি।’
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকারে মতো, যা মোট অর্থ প্রবাহের প্রায় ২২ শতাংশ। অর্থাৎ অনেক মানুষ এখানে বিনিয়োগ করেছে। কারণ, এখানে সুদহার বেশি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।
আগামী ৯ আগস্ট থেকেই ব্যাংক ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ করতে বাধ্যবাধকতা করা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংক মালিকদের সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর একটা দাবি ছিল কিন্তু এখনই কমানো হচ্ছে না, এতে করে তাদের নিকট কি নেগেটিভ ম্যাসেজ যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না এখানে নেগেটিভের কিছু নেই। আমরাতো কমাতে চাচ্ছি।
ব্যাংকেও সুদহার কম, শেয়াবাজারে বিনিয়োগ নিরাপদ নয় তারপর যদি সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো হয় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবে- এ বিষয়ে মুহিত বলেন, সুদহার একটু কমলেও এখানে বিনিয়োগ নিরাপদ। আমাদের পলিসি হচ্ছে, আমরা সবসময় বাজার রেটের থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি রাখি। কিন্তু এটার পার্থক্যটা অনেক বেশি হয়ে গেলে আমরা সুদহার রিভিউ করি।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার
সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে পাঁচ বছরমেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচবছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ রয়েছে।
এমইউএইচ/জেডএ/আরআইপি/এমএস