পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূলে
বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর এ কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট পরামর্শক আল্লা মালিক কাজমী, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস কে সুর চৌধুরী, প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সল আহমেদ, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুদহার কমানোর কারণে পুঁজিবাজারে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। পুঁজিবাজারে মিস ম্যাচ কমে গেছে। এ ছাড়া আন্তঃব্যাংক লেনদেনের সুদহার কম রয়েছে। এগুলো পুঁজিবাজারে বিনিযোগ বাড়াবে। তাই এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।
ফজলে কবির বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়নের সময় সবসময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় কার্যক্রম জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। এ জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকে মূলধন বাজারে ইকুইটি এবং বন্ড ইস্যু কার্যক্রম বিকাশের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সঙ্গে চীনা কনসোর্টিয়ামের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের চুক্তি হয়েছে। চায়নিজদের জড়িত হওয়ার কারণে বর্তমান পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর জন্য আলোচনা চলছে। এটি সমন্বয় করা হবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।
এ ছাড়া দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় পাশে থাকবে।
ব্যাংকগুলোর ছয়-নয় সুদহার বাস্তবায়ন নজরদারিতে আছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো কী হারে আমানত সংগ্রহ করছে এবং ঋণ কী হারে দিচ্ছে, তা নজরদারির মধ্যে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আমদানির সঙ্গে টাকা পাচার হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘অনুসন্ধানে চার হাজার কোটি টাকা পাচারের একটা তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তা পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে আরও কাজ চলছে।’
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় সংযত মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগান যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সরকারি ঋণের প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, ২০১৮ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রকৃত অর্জন বেশি অর্থাৎ ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়েছে। তবে গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে পরিমিত রাখার লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জিত হয়নি। এ বছরের জুনে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আমদানি পণ্যের খরচ বাড়ায় এ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবছর দুবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। ছয় মাস অন্তর এই মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
এসআই/জেডএ/আরআইপি