মুসলিম চৌধুরীকে বিদায় সংবর্ধনা
হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া সাবেক অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরীকে সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় জানালেন সহকর্মীরা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্মৃতি রোমন্থনসহ অর্থমন্ত্রী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের প্রশংসায় ভাসলেন তিনি।
সোমবার সচিবালয়ের অর্থ বিভাগের সভাকক্ষে এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অর্থ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মুসলিম চৌধুরীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল সংস্কার তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তারই উদ্ভাবনী চিন্তার কারণে আজ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থছাড় সহজ হয়েছে। এছাড়াও বেতন, পেনশনসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় বিভিন্ন ভাতা প্রদান সহজ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অর্থ বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত কাজের বর্ণনা দেন। অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী মুসলিম চৌধুরীর হতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।
এর আগে গত ১৭ জুলাই মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) পদে শপথ নেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। সেইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন।
গত ১৫ জুলাই অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে নতুন সিএজি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।
মুসলিম চৌধুরী ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অ্যাকাউন্টিং-এ অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিং- এ ডিস্টিংশনসহ মার্স্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ২০০৫ সালের ২১ এপ্রিল সরকারের উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পান। বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের বিভিন্ন পদে এবং অর্থ বিভাগে উপ-সচিব, যুগ্ম-সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর তাকে অর্থ সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও তিনি সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কার্যক্রমে দীর্ঘদিন যুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে উক্ত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্বে দিচ্ছেন।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কার্যক্রমে বিশেষ অবদানের জন্য মুসলিম চৌধুরী ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জনপ্রশাসন পদক পান। আগামী ২৩ অক্টোবর তার সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের কথা ছিল।
সূত্র জানায়, সংবিধানের ১২৭ নং অনুচ্ছেদের বিধান মতে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এর পদ সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতির উপর উক্ত পদে নিয়োগের ক্ষমতা অর্পিত হয়েছে। সংবিধানের ১২৭(১) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক তার দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ হতে ৫ বছর বা ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যা আগে ঘটে সে পর্যন্ত তিনি তার পদে বহাল থাকবেন।
মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত মাসুদ আহমেদের চাকরির মেয়াদ গত ২৭ এপ্রিল পূর্ণ হয়েছে। তাই গত ২৮ এপ্রিল হতে বর্ণিত পদটি শূন্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সাংবিধানিক পদে একজন উপযু্ক্ত প্রার্থী জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া আবশ্যক। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক পদের যোগ্যতা সম্পর্কে সংবিধান বা আইনে কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। তবে এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত সচিব পদে কর্মরত বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১১ জন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করা হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন।
এমইউএইচ/জেএইচ/পিআর