‘ওষুধ ইউনিট বন্ধে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মুনাফা বাড়বে’
বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল (ওষুধ) ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মুনাফা বাড়বে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম আজিজুল হক।
রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ওয়েস্টিন হোটেলে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকিবুর রহমান।
এম আজিজুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ব্যবসার ৭০ শতাংশই কনজুমার হেলথকেয়ারের। বাকি ৩০ শতাংশ ফার্মাসিউটিক্যালের। ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিটের বাণিজ্যিক কর্যক্রম বন্ধ করা হলেও গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের কনজুমার হেলথকেয়ার কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিট লোকসানের। সব ইউনিট মিলে আমাদের যে মুনাফা হয়, কনজুমার হেলথকেয়ারে মুনাফার পরিমাণ তার থেকেও বেশি। কনজুমার হেলথকেয়ারের মুনাফা থেকে ফার্মাসিউটিক্যালের লোকসান বাদ দিয়ে মোট মুনাফা দেখানো হয়। সেই হিসাবে ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিট বন্ধ করে দেয়া হলে সামনে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মুনাফা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।’
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকিবুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের পর্ষদ সভায় লোকসানজনক ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর ফলে প্রভাব পড়া সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে সম্মান ও মর্যদাপূর্ণ আচরণ এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিত করবে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ’র চট্টগ্রামের কারখানা বন্ধ করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে উৎপাদিত অনেক ওধুষ গুদামজাত থাকার পরও এবং বাজারে ওই ওষুধের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তা বাজারজাত করা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে ওষুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিককে বিনা কাজে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
শ্রমিকদের এ অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নকিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে রিভিউ চলছিল, যে কারণে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। আর ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলে তাৎক্ষণিক যাতে বাজারে ওষুধের ঘাটতি না হয় সে জন্য মজুদ করে রাখা হয়।’
ফার্মাসিউটিক্যালের ইউনিট বন্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিষয়ে কী ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি তাদের নতুন চাকরি পেতে আমরা সহায়তা করব।’
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ সময় পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, শ্রমিকদের কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে এবং গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের অন্য ইউনিটে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে কিনা?
উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম আজিজুল হক বলেন, ‘শ্রমিকদের কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আর ফার্মাসিউটিক্যাল ও কনজুমার হেলথকেয়ার ইউনিটের কাজ আলাদা। ফার্মাসিউটিক্যালের কর্মী দিয়ে কনজুমার হেলথকেয়ারের কাজ করানো যাবে না। তবে যারা কনজুমার হেলথকেয়ারে কাজ করার উপযুক্ত তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’
গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কত বছর ধরে লোকসান করছে এবং লোকসানের পরিমাণ কেমন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে এম আজিজুল হক বলেন, ‘এর কোনো হিসাব আমরা এ মুহূর্তে দিতে পারছি না। আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিটের লাভ-লোকসনের তথ্য আলাদাভাবে দেখানো হয় না।’
এমএএস/এমএআর/পিআর