এশিয়ার অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে : এডিবি
উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমেই বাণিজ্য ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংরক্ষণমূলক বাণিজ্যনীতির মাধ্যমে শুল্ক আরোপ করছে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীনসহ অন্যান্য দেশও শুল্ক আরোপ করছে। এর ফলে এশিয়াতে বাণিজ্য ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এডিবি।
এপ্রিলের হালনাগাদ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যা ২০১৯ সাল নাগাদ কিছুটা কমে ৫ দশমিক ৯ ভাগে নেমে আসতে পারে। এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, শিল্পসমৃদ্ধ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি এ বছর সাড়ে ৬ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে যা আগামী বছর ৬ দশমিক ৪ ভাগে নেমে আসতে পারে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বছরের শুরুর দিকে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, সোলার প্যানেল এবং ওয়াশিং মেশিন আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জুলাইয়ের শুরুতে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, রাশিয়ার সাথেও সংরক্ষণমূলক বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এদিকে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এ ধরনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে এডিবি। এর ফলে এশিয়ার প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য রয়েছে সেটি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুইয়োকি সাওদা এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, সংরক্ষণমূলক বাণিজ্যনীতির ফলে উন্নয়নশীল এশিয়ার বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে। বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা এই অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি মনে করেন।
এপ্রিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ ভাগ এবং ২০১৯ সাল নাগাদ এই হার ৬ দশমিক ৪ ভাগে নেমে আসতে পারে। চীনে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে বলে আশা করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে। ভারতের শক্তিশালী অর্থনীতির কারণে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ায় ৭ দশমিক ৩ ভাগ এবং পরের বছর ৭ দশমিক ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি হবার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ভারতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ এবং করখাতে সংস্কার আনায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আগের বছর বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এ বছর কৃষিখাতে লক্ষ্যের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি হবে বলে হিসাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। ভিয়েতনামে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে।
এবারের প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল এশিয়ায় ২ দশমিক ৮ ভাগ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আশা করা হয়েছে ২০১৯ সাল নাগাদ এটি আরও কমে ২ দশমিক ৭ ভাগে নেমে আসতে পারে। তবে কিছু দেশে জ্বালানি ও খাদ্যে ভর্তুকি বাড়তে পারে। যার ফলে মূল্যস্ফীতির হারও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এডিবি এপ্রিলের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ১ ভাগ হওয়ার পূর্বাভাস দিলেও এটি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমএ/বিএ/এমএস