ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

কর্মী ঠকাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড!

প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৮

কর্মচারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। অতিরিক্ত সময় কাজ করিয়ে নিলেও তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর কাজ করিয়ে নিলেও স্থায়ীকরণ হচ্ছে না চাকরি।

দেশে প্রচলিত শ্রম আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যবসা করছে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকটি। শত শত কোটি টাকা মুনাফা করে দেশের অর্থ বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যদিকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সেখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, ব্যাংকটিতে প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করছেন। এর মধ্যে মাত্র একবার সামান্য বেতন বেড়েছে, তাও পাঁচ বছর পর। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ওভার টাইমের টাকা দেয়া হয় না। বছরে দুটি বোনাস দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় একটি। কিছু বলাও যায় না। কারণ এসব বিষয়ে কথা বললে চাকরিচ্যুত করা হয়।

তিনি বলেন, ‘কাজের কোনো স্বাধীনতা নেই। বেশির ভাগ কর্মী দীর্ঘদিন কাজ করছেন অথচ ন্যায্য বেতন পাচ্ছেন না। এখানে অনেক কর্মী সারাদিন কাজ করে মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেতন পান। অনেকে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন কিন্তু চাকরি স্থায়ী করা হয়নি, বেতনও বাড়েনি।’

‘অসুস্থতার কারণে এক কর্মচারী অতিরিক্ত কাজ করতে চাননি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বের করে দেয়া হয়। আইন অনুযায়ী তার কোনো পাওনাও পরিশোধ করা হয়নি। তাই সব সময় আতঙ্কে থাকি কোন সময় চাকরি চলে যায়।’

ব্যাংকটির ওই কর্মী আরও বলেন, ‘বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি দেশে ব্যবসা করে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা শ্রমিকরা এখানে কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে আঁতাত করে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা করছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের ইচ্ছামতো ঠকানো হচ্ছে।’

‘শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কর্মীদের ঠকাচ্ছে বিদেশি ব্যাংকটি। আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্স নেয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকটি সংশ্লিষ্ট অধিদফতর থেকে তা নেয়নি। অর্থাৎ লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে কিন্তু ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না’- অভিযোগ করেন তিনি।

শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমন বিরূপ আচরণের তথ্য উঠে এসেছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের এক পরিদর্শনে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও বিধিমালা ২০১৫ লঙ্ঘন করছে। শ্রম আইনের ধারা ৪ (৮) অনুযায়ী, শ্রমিক ও কর্মচারীদের নির্ধারিত শিক্ষানবিশকাল শেষে চাকরি স্থায়ী করার বিধান থাকলেও ব্যাংকটি তাদের কর্মচারীদের স্থায়ী করেনি।

‘ব্যবস্থা করা হয়নি শ্রমিক ও কর্মচারীদের সার্ভিস বইয়ের। বিধিগত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্সও নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। বিদেশি ব্যাংকটি কর্মচারীদের আট ঘণ্টার বেশি কাজ করাচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় (ওভার টাইম) ভাতা ‘পরিশোধ আইন’ মোতাবেক পরিশোধ করছে না, যা শ্রম আইনের ধারা ১০০ ও ১০৮ এর লঙ্ঘন।’

শ্রম আইনের ১১১ ধারা অনুযায়ী, কাজের সময়সূচি দফতর থেকে অনুমোদনের বিধান থাকলেও ব্যাংকটি তা নেয়নি। ব্যাংকটি যেসব বিষয়ে আইন লঙ্ঘন করছে তা সংশোধনের জন্য আটদিনের সময় বেধে দিয়ে চিঠি দেয় অধিদফতর। বলা হয়েছিল, এ সময়ের মধ্যে সংশোধন না হলে শ্রম আদালতে মামলা করা হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব পাবলিকেশন অ্যাফেয়ার্স বিটুপি দাস চৌধুরী ‘লিখিত প্রশ্ন করলে উত্তর দেবেন’ বলে জানান। একই সঙ্গে প্রশ্ন পাঠাতে একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেন। ই-মেইলে প্রশ্ন করা হলেও ব্যাংকটির পক্ষ থেকে উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর বিটুপি দাস চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি বছরের এপ্রিলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বগুড়া শাখায় অধিদফতরের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয়। বিদেশি ব্যাংকটি শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে। বিষয়টি সংশোধনের জন্য চিঠি দেয়া হয়। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও আমাদের একটি চিঠি দেয়।’

‘যেহেতু ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সেহেতু শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা বসব। এরপর আইন অনুযায়ী তাদের (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’- যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যাংক আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দিচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মাথাপ্রতি ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকার চুক্তি করে। কিন্তু কর্মীদের দেয়া হয় মাত্র ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। এভাবে সুযোগ নিয়ে কর্মচারীদের ঠকাচ্ছে ব্যাংকগুলো।’

‘যারা ন্যায্য পাওয়ার জন্য প্রতিবাদ করেন তাদেরই চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা এ দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের ঠকাচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছি।’

তিনি প্রত্যাশা করেন, ‘শ্রম মন্ত্রণায়লসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এসব বিষয়ে নজর দেবে এবং শ্রমিক ঠকানো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এসআই/ওআর/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন