ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

আশা-নিরাশার দোলাচলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ৩০ জুন ২০১৮

পুরো রমজান মাসে মন্দার মধ্যে থাকা শেয়ারবাজারে ঈদের পর টানা চার কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলেছে। তবে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই দরপতন হয়েছে। এতে শেয়ারবাজার নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ব্যাংক খাতকে বেশ কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাজেটেও কর্পোরেট করে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও শেয়ারবাজারে ব্যাংকের শেয়ারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। শুধু ব্যাংক খাত নয়, সব খাতের অবস্থাই এখন নড়বড়ে। ফলে সূচকের হঠাৎ বড় উত্থান হচ্ছে আবার পরের কার্যদিবসেই বড় পতন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এর মূল কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না, যে কারণে বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তবে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এখন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।

রুবেল হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুরো রোজার মাসজুড়েই শেয়ারবাজারে মন্দাভাব ছিল। সে সময় বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শোনা যায় ঈদ উপলক্ষে বিক্রির চাপ থাকায় বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। ঈদের পর আবার বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। ঈদের পরের সপ্তাহে অবশ্য কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল বাজার। কিন্তু চলতি সপ্তাহে তো আবার টানা পতন দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিজের বিনিয়োগ কী করে নিরাপদ ভাববো।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। সংবাদ মধ্যমের খবর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে তো স্বাভাবিকভাবেই বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাজার উল্টো আচরণ করছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে পুঁজি রক্ষা করার কোনো পথ থাকবে না।

মো. ইব্রাহিম হোসেন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, রোজার মাসের টানা পতনে পোর্টফোলিওতে থাকা বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কেনা দামের নিচে চলে আসে। ঈদের পর টানা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা দেয়ায় লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন তো আবার টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। এতে শেয়ারের দাম যেটুকু বেড়েছিল, প্রায় তার সমান কমে গছে।

তিনি বলেন, বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম খুব একটা বাড়ছে না। অথচ হঠাৎ হঠাৎ কিছু দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে বাজার নিয়ে একটি গ্রুপ খেলা করছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এই গ্রুপের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে কারসাজি চক্র ঠিকই মুনাফা তুলে নিচ্ছে, আর ধরা খাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারের ওপর কিছুইতে আস্থা ধরে রাখা সম্ভব না।

বিনিয়োগকারী মনির হোসেন বলেন, শেয়ার বিক্রি করে যে বেরিয়ে যাব তারও উপায় নেই। আমার কাছে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের যে দাম তাতে বিক্রি করলে বড় অংকের লোকসান হবে। আবার কিছু শেয়ার কিনে যে সমন্বয় করবো তারও উপায় নেই। কখন কোন শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে বোঝা বড় মুশকিল। আশায় ছিলাম ঈদের পর বাজার ভালো হলে কিছু শেয়ার বিক্রি করে লোকসান সমন্বয় করবো। কিন্তু বাজার ভালো হওয়া তো দূরের কথা উল্টো আরও খারাপ হচ্ছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে। এরপর থেকেই সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। তবে মূল পতন শুরু হয় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এসে। মে মাসজুড়ে সেই ধারা অব্যাহত থাকলে ৩১ মে ডিএসইএক্স কমে ৫ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে নেমে আসে।

এরপর ঈদের আগের শেষ দুই কার্যদিবসে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিললে ডিএসইএক্স বেড়ে ৫ হাজার ৩৬৫ পয়েন্টে চলে আসে। তবে ঈদের পরের কার্যদিবসে আবার দরপতন হয়। অবশ্য তার পরের চার কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। ফলে ডিএসইএক্স আবার সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করে। ২৪ জুন লেনদেন শেষে সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫২১ পয়েন্টে। কিন্তু চলতি সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই দরপতন হওয়ায় তা কমে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে।

বাজারের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাজার এখন যে আচরণ করছে এর মূল কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। বিনিয়োগকারীরা কিছুতেই বাজারের উপর আস্থা ফিরে পাচ্ছে না। তাছাড়া এখন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচিত ভালো কোম্পানির শেয়ার কেনা। তাদের অবশ্যই মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। কান কথায় এই কোম্পানি, ওই কোম্পানির শেয়ার কেনা ঠিক হবে না। আর মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনে হুটহাট বিক্রি না করে ধরে রাখতে হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান বলন, এটি নির্বাচনের বছর। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন রয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে সব মহলেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক রয়েছে, সামনে কী হয় তা নিয়ে। এ বছর যতই প্রণোদনা দেয়া হোক বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে। তারই একটা প্রভাব আমরা বর্তমান শেয়ারবাজারে দেখতে পাচ্ছি।

তিনি বলেন, ডিএসই কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে (জোট) পেয়েছে। এটি শেয়ার বাজারের জন্য বড় সুখবর। কিন্তু আমাদের শেয়ারবাজারের ভিত্তি এখনও ততোটা মজবুত হয়নি। বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ড দুরবস্থার মধ্য রয়েছে। ফলে বাজারের সঙ্কটের সময় মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। এ দুরবস্থার কারণ হলো ফান্ড ম্যানেজাররা চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে এবং পেশাদার লোক নেই।

এমএএস/এমএমজেড/এমআরএম/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন