কাঁচা মরিচের কেজি ১৪০, টমেটো ১৩০ টাকা
ঈদের পর গত দুই সপ্তাহে রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কম থাকলেও এখন তা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। চলতি সপ্তাহে বেড়েছে সব ধরনের সবজির সরবরাহ। তবে রোজার তুলনায় প্রায় সব সবজির দাম কিছুটা চড়া। সবচেয়ে দাম বেড়েছে টমেটো ও কাঁচা মরিচের।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়তে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে। আর টমেটোর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। এখন যে টমেটো বিক্রি হচ্ছে তা মজুত করে রাখা। ফলে বাজারে সীমিত আকারে আসছে টমেটো। যে কারণে দাম বেড়েছে। তবে অধিকাংশ সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, চিচিংগা, বেগুন, কাকরোল, ঢেঁড়স, করলাসহ প্রায় সব সবজিই বাজারে ভরপুর।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। আর এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। অথচ রোজার সময় কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল ৪০-৫০ টাকা কেজি। আর ২৫০ গ্রামের দাম ছিল ১০-১৫ টাকা। অপরদিকে রোজায় ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা।
হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার বিষয়ে হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী সাদেক হোসেন বলেন, আড়তে মরিচ খুব অল্প পরিমাণে এসেছে। যে ব্যবসায়ীরা সকাল সকাল আড়তে গিয়েছিলেন তারা কিছু মরিচ কিনতে পেরেছে। কিন্তু যারা পরে গেছেন তাদের অনেকেই পায়নি।
এই ব্যবসায়ী বলেন, রোজায় এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি ১০-১৫ টাকা। এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ বৃষ্টিতে অনেকের মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। আবার যারা আগে লাগিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশের মরিচ শেষের পথে।
খিলগাঁও বাজারের মো. রবিউল বলেন, সস্তায় মরিচ খাওয়ার দিন চলে গেছে। এ বছর আর ৪০-৫০ টাকা কেজি মরিচ খেতে হবে না। এখন ২৫০ গ্রাম মরিচের দামই ৪০ টাকা। কিছুদিন পর হয় তো ৫০ টাকা হবে।
হঠাৎ মরিচের দাম এতো বাড়লো কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রশ্ন আমাদের কাছে না করে আড়তদার ও চাষীদের কাছে করেন। তাহলেই সঠিক তথ্য পাবেন। তবে এটুকু বলতে পরি আড়তে মরিচের সরবরাহ অনেক কম। গত সপ্তাহেও সরবরাহ যথেষ্ট ছিল। যে কারণে দামও কিছুটা কম ছিল।
টমেটোর দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী জামাল বলেন, এখন টমেটোর মৌসুম না। ব্যবসায়ীরা যে টমেটো মজুত করে রেখেছিলেন এখন সেগুলোই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যারা টমেটো মজুত করে রেখেছিলেন তারা বাজারে সীমিত পরিমাণে ছাড়ছেন। ফলে দাম বেশি। সহসা টমেটোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে বাজার ও মান ভেদে প্রতিকেজি চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা রোজার সময়ে ছিল ৪০-৫০ টাকা। আর রোজায় ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুন, ঝিঙা ও ধুন্দলের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে । এ দুটি সবজি ঈদের আগের মতোই ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে পটল, ঢেঁড়স, করলা, বরবটি। পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। রোজায় এই সবজির দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। অথচ ঈদের আগে এই সবজিটির দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। আর ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া করলার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। ৪০-৫০ টাকা কেজির বরবটির দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা।
এদিকে রোজার মধ্যে বাজারে সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া কাকরোল ও পেঁপের দাম বেশ কমে গেছে। রোজায় ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাকরোলের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। আর ৭০-৭৫ টাকা কেজির পেঁপের দাম কমে এখন হয়েছে ২৫-৩০ টাকা।
সবজির দামে মিশ্র প্রবণতা থাকলেও সব ধরণের শাকের দাম বেড়েছে। রোজার মধ্যে ৫-১০ টাকা আটি বিক্রি হওয়া লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাকের দাম বেড়ে ১০-১৫ টাকা আঁটি হয়েছে। ২০-২৫ টাকা আটি বিক্রি হওয়া পুইশাক ও লাউ শাকের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
তবে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজের। দেশি পেঁয়াজ বাজার ও মান ভেদে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা কেজি। ঈদের আগেও পেঁয়াজের দাম এমনই ছিল।
রোজার মাসে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লাল কক মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সাদা বয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ১৬০-১৭০ টাকা হয়েছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী খায়রুল বলেন, বাজারে এবারই রোজার সময় মরিচ ও সবজির দাম সব থেকে কম ছিল। আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, রোজায় এতো কম দামে মরিচ ও সবজি বিক্রি হতে দেখেনি।
তিনি বলেন, রোজার সময় মরিচ ও সবজির যে দাম বাড়ার কথা ছিল এখন তা বাড়ছে। যদিও কিছু কিছু সবজির দাম এখনও কিছুটা কম। তবে আমাদের ধারণা সামনের সপ্তাহে আরও কিছু সবজির দাম বাড়বে।
এমএএস/এমএমজেড/এমএস