সরকারি আমানত ৬ শতাংশ সুদে চান বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা
* ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নামাতে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
* আগ্রাসী ব্যাংকিং করে সঙ্কট তৈরি করা যাবে না
* খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আগামী জুলাই মাস থেকে বিনিয়োগের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে স্বল্প সুদে সরকারি আমানতের নিশ্চয়তা চেয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও)।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। সেখানে তারা এই নিশ্চয়তা চেয়েছেন।
এবিবির প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চান। এবিবির প্রস্তাবটি সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন গভর্নর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন বিনিয়োগের সুদহার ৯ শতাংশ হবে। এটি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে আমাদের তারল্য যোগান দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারি আমানত ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এই আমানত ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এর বেশি সুদ যাতে সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠান তহবিল যোগানে না চায় সেটি সরকারিভাবে জানিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য রয়েছে। এসব তারল্যের অংশ আমাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আসতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এক অঙ্কে ঋণের সুদ নামিয়ে আনার ঘোষণা বাস্তবায়নে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেবে। তাই এবিবির দাবি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন গভর্নর। প্রয়োজনে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায় কি-না সেটিও প্রস্তাব করা হবে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারবে কি-না সেটি নিয়েও বৈঠকে বক্তব্য এসেছে। তাছাড়া অর্থ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করলেও অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সেটি আদৌ আমলে নেবে কি-না তা নিয়ে শঙ্কা তুলে এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সরকারি ব্যাংক, মন্ত্রণালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। যাতে ওসব প্রতিষ্ঠান তহবিল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বেশি সুদ দাবি না করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বেশকিছু দিক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে এবিবির প্রতিনিধিদের। সেখানে একই সঙ্গে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও খুব বেশি আইনি ব্যতয় বরদাস্ত করা হবে না। তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করছে কি-না সেটি নজরদারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে তাদের কাছে বিতরণ করা ঋণের হালাগাদ তথ্য চাওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্ম উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ১ জুলাই থেকে সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে মর্মে আশ্বস্ত করেছে এবিবি। আমরা বলেছি, ভালো কথা। তবে ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা পরিপালন করতে হবে। ব্যাংককে কোনোভাবে ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে।
এ ছাড়া ঋণের মান নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ আমানত হার যাতে লঙ্ঘন না হয় ও আগ্রাসী ব্যাংকিং করে ব্যাংকে যাতে নতুন সঙ্কট তৈরি করা না হয় সেটিও আমরা জানিয়ে দিয়েছি, - যোগ করেন এস কে সুর।
জানা গেছে, বৈঠকে এবিবির প্রতিনিধিদের খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগ দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে তাদের সক্ষমতা বাড়বে। তাছাড়া সম্পদ দায় ব্যবস্থাপনায় সর্তক থাকতে বলেছে। আর পুরো প্রক্রিয়ার ওপরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর থাকবে।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান, এস এম মনিরুজ্জামান, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান, বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম, সদস্য এনআরবি ব্যাংকের এমডি মো. মেহমুদ হুসাইন, ইউসিবিএলের এমডি এ ই এ মুহাইমেন উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/জেডএ/পিআর