ই-পাসপোর্ট তৈরিতে ৪৬৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প
দেশে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করছে সরকার। এ জন্য চার হাজার ৬৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্হিবিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সর্বশেষ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন পাসপোর্ট ইস্যু সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাংলাদেশি নাগরিক ও আগত বিদেশি নাগরিকদের সুষ্ঠুভাবে গমনাগমন সুনিশ্চিতকরণ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেলেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশি পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রকল্পটি জরুরি। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৬৩৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর পুরোটাই জিওবি থেকে ব্যয় হবে। সরকারের সুরক্ষা সেবা বিভাগের আওতায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট কর্তৃক এটি বাস্তবায়িত হবে। বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশে-বিদেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন সেন্টার আধুনিকায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা (ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়, ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট অফিস, ডাটা সেন্টার, পাসপোর্ট অ্যাসেম্বলি লাইন, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র), ৬৪টি জেলায় অবস্থিত ৭২টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস; বিদেশে অবস্থিত ৮০টি বাংলাদেশ মিশন; যশোরে অবস্থিত ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার; দেশের অভ্যন্তরে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর (২টি স্থলবন্দরে স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল সিস্টেম, ২২টিতে ই-পাসপোর্ট রিডারের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন); ৭২টি এসবি/ডিএসবি অফিস।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সরকার ২০১০ সালের এপ্রিলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) সিস্টেম প্রবর্তন করে। কিন্তু চালুকৃত এমআরপি ব্যবস্থায় পাসপোর্টের জালিয়াতির সম্ভাবনা এবং দশ আঙুলের ছাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ না থাকার সুযোগে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা ধরা পড়ায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমটি চালু করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের এপ্রিলে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফরকালে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জিএমবিএইচ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বাংলাদেশে ই-পার্সপোর্ট চালুর বিষয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট বুকলেট সংগ্রহ (২০ লাখ সরাসরি আমদানি, ২৮০ লাখ দেশে উৎপাদন); ই-পাসপোর্টের জন্য ডেমোগ্রাফিক তথ্য, দশ আঙুলের ছাপ, চোখের কর্নিয়ার ছবি এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর সংগ্রহ পূর্বক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তথ্যসমূহ কেন্দ্রীয় ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টারের সার্ভারে সংরক্ষণ এবং পাসপোর্টের আবেদনকারীদের পাসপোর্ট প্রদানের জন্য পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের পর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস/দূতাবাসমূহে পাসপোর্ট প্রেরণ এবং তৈরি পাসপোর্ট বিতরণ।
এ কাজটি নিরবচ্ছিন্নভাবে করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন- সার্ভার, রাউটার, সুইচ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, ই-পাসপোর্ট রিডার, প্রিন্টিং মেশিন স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টলেশন সম্পন্ন করা; জনবল নিয়োগ (প্রেষণে-৩২ জন; আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে-১৯০ জন); যানবাহন সংগ্রহ-২৫টি; মেরামত ও সংরক্ষণ (মোটরযান, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি) করা হবে।
এমএ/বিএ