ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

হাইকোর্টে রিট করলেই পার পাওয়া যায়

মেসবাহুল হক | প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ২০ জুন ২০১৮

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের (ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে দায়ের করা বিভিন্ন রিট মামলায় আটকে আছে ৬২ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। যা মোট ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণখেলাপিরা অর্থঋণ আদালতের মামলা উচ্চ আদালতের রিট পর্যন্ত আনতে পারলেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এটি খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক থেকে কোনো গ্রাহক ঋণ নিয়ে যখন সময় মতো পরিশোধ না করেন তখন সে ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ ঋণ আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। অর্থঋণ আদালতের ৯০ শতাংশ রায় ব্যাংকের পক্ষে আসে। কিন্তু ঋণখেলাপিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এবং আইনের দুর্বলতায় সে মামলা হাইকোর্ট বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে রিট করার পর ওই মামলার কার্যক্রম প্রায় স্থগিত হয়ে যায়। উচ্চ আদালতের আদেশ ব্যতীত ওই ঋণ আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করার আর কিছুই থাকে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক খাত-সংক্রান্ত রিট মামলাসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগে অন্তত একটি পৃথক বেঞ্চ গঠনের আবেদন জানিয়ে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আর্থিক খাতে রিট মামলার সংখ্যা এবং তাতে জড়িত টাকার পরিমাণ উভয়ই আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে পেন্ডিং রিট মামলার সংখ্যা ছিল চার হাজার ২৫০টি। বর্তমানে সেটি এক হাজার ৭১৮টি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৮টিতে।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘২০১৫ সালে রিট মামলার সঙ্গে জড়িত টাকার পরিমাণ ছিলে ৪৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। বর্তমানে তা ১৫ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকায়।’ এসব মামলার নিষ্পত্তি ত্বরান্বিত করা গেলে খেলাপি ঋণ আদায় সহজতর হবার পাশাপাশি ঋণশৃঙ্খলা জোরদার করা যাবে। এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি রোধ, আর্থিক খাত স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালীকরণসহ বিনিয়োগ ও উৎপাদনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টে কোনো কোনো খাতের জন্য পৃথক বেঞ্চ থাকলেও আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক কোনো বেঞ্চ নেই। ফলে উচ্চ আদালতে ওই মামলাসমূহের নিষ্পত্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। একই সঙ্গে পুঞ্জিভূত মামলার সংখ্যা এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়।’ অবশ্য এর আগেও একই ইস্যুতে আরও দু’দফা আইনমন্ত্রী বরাবর চিঠি লেখেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ওইসব চিঠিতেও কোনো কাজ হয়নি।

চিঠিতে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে ৬৩টি ব্যাংক ও ২৯টি আর্থিকপ্রতিষ্ঠান মিলে দেশের আর্থিক বাজার পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেকগুণ বড়। ফলে খেলাপি ঋণ ও সংশ্লিষ্ট মামলার সংখ্যাও একইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতারা ইচ্ছাকৃতভাবে নানা কৌশলে ঋণ পরিশোধ বিলম্বিত করার জন্য রিট মামলা দায়ের করেন। এছাড়া জেলাপর্যায়ে বিজ্ঞ আদালতসমূহের সংশ্লিষ্ট মামলায় প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধেও রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। উপরন্তু খেলাপি গ্রাহকরা একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধার্থে খেলাপির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যভাণ্ডারে অন্তর্ভুক্ত না করার জন্যও রিট মামলা দায়ের করে থাকেন। এরা সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে থাকেন এবং কৌশলে মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি বিলম্বিত করেন। ফলে মামলার জট তৈরি হচ্ছে এবং ঋণ আদায় ও ঋণ প্রবাহ উভয়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিচারহীনতার কারণে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। এরা বারবার আইনের আশ্রয়ে অর্থাৎ রিট করে স্থগিতাদেশ নিয়ে নিজেদের লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু তাদের শাস্তির আওতায় না আনায় তারা ধরে নিয়েছেন যে, অপরাধ করলে কিছুই হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমবে না।’ অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণ মামলার বোঝা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধান বিচারপতিসহ একটি যৌথ উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘এখানে আইনি জটিলতা আছে। তা না হলে ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এমন জট সৃষ্টি হবে কেন? বিচারকের অভাব বা আইনে কোনো জটিলতা আছে কি না- তা শনাক্ত করতে হবে। এজন্য এর ভেতরে ঢুকতে হবে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করে জট কমাতে হবে।’

আরও পড়ুন >> কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ভূমিকা রাখতে পারছে না

উচ্চ আদালতে ব্যাংক ঋণ মামলা পরিচালনার জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠনেরও পরামর্শ দেন তিনি।

এমইউএইচ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন