বাজেটে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই
নতুন অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবসাবান্ধব হলেও তা শেয়ারবাজারবান্ধব নয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বাজেটে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার কোনো প্রতিফলন হয়নি।
রোববার সিএসইর ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার।
তিনি বলেন, আমরা শেয়ারবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক কৌশল প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যা ঘোষিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। অর্থমন্ত্রীর উপস্থাপন করা বাজেটে চলমান অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় শেয়ারবাজারের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো কিছুই উপস্থাপিত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে তার প্রতিফলন বাজেটে নেই।
সাইফুর রহমান বলেন, বর্তমানে লক্ষাধিক লিমিটেড কোম্পানি, কোম্পানি আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত। এর মধ্যে কমপক্ষে কয়েক হাজার কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু যে পরিমাণ কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আছে তা একান্তই নগণ্য।
ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের কর্পোরেট কর হার কমানোর ফলে শেয়ারবাজারে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সাইফুর রহমান বলেন, ব্যাংকের অন্যান্য বিষয় ঠিক থাকলে কর্পোরেট কর হার কমানোর কারণে মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে শেয়ারবাজারেও এর কিছুটা ইতিবাচকব প্রভাব পড়বে। তবে আমাদের ধারণা শেয়ারবাজারের কথা চিন্তা করে এই কর্পোরেট কর হার কমানো হয়নি। কারণ তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত উভয় শ্রেণির ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ রয়েছে। আমাদের প্রস্তাব ছিল এই ব্যবধান ১৫ শতাংশ করা। আমাদের ধারণা তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানো হলে ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসবে।
শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য বাজেটে ১২টি বিষয় বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান সিএসইর এমডি।
এক. সরকারি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সুস্পষ্ট তাগিদ এবং নির্দেশনা।
দুই. বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে যথাযথ আইনি সংস্কারকরণ।
তিন. বন্ড মার্কেটসহ শেয়ারবাজারের অ্যাডভান্স প্রডাক্ট চালু করার লক্ষ্যে কাঠামোগত সংস্কারকরণ।
চার. প্রাইভেট সেক্টরে বৈদেশিক ঋণ এবং সিন্ডিকেশন ফাইন্যান্সিং অনুমোদনের সময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির শর্তারোপ।
পাঁচ. শেয়ারবাজার বিকাশের জন্য জাতীয়ভিত্তিক শক্তিশালী সমন্বয় কমিটি গঠন।
ছয়. ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক কোম্পানির জন্য যে আড়াই শতাংশ কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে, সেই সুবিধা তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির জন্য প্রদান করা। ক্রমান্বয়ে ভবিষ্যতে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা।
সাত. তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ আয় দ্বৈত কর রোহিতকরণ।
আট. শেয়ারবাজার অবকাঠামো টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানসম্মত এবং লাভজনক কর্পোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে আইনি বাধ্যবাধকতা, রেগুলেটরি সমন্বয় এবং আর্থিক প্রণোদনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৌশল প্রণয়ন। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ক্যাপিটাল মোবিলাইজেশনের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ।
নয়. শেয়ারবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং বিনিয়োগকারীসহ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী এবং কার্যকর ব্যবসায়িক মডেল নিশ্চিত করা। এজন্য স্বল্প মেয়াদি কৌশল হিসেবে লেনদেনের ওপর ধার্য করা উৎস কর হ্রাস করা এবং নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা।
দশ. ক্যাপিটাল মার্কেট স্পেশাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবির ভূমিকা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে- আইসিবিকে আর্থিককভাবে শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক আইসিবিকে দেয়া ফান্ড/ঋণ সিঙ্গেল এক্সপজার লিমিটে শিথিল করতে হবে এবং ক্যাপিটাল মার্কেট সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগের বাইরে আইসিবির ভূমিকা সীমিত করতে হবে।
এগারো. সিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়ন তথা স্টেটেজিক ইনভেস্টর আন্তর্ভুক্তকরণের স্বার্থে এক্সচেঞ্জসমূহকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা বহাল করা।
বার. ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের চলমান অস্থিরতা নিরসন এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করে যথাযথ কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজনীয় বাবস্থা গ্রহণ।
এমএএস/এমআরএম/আরআইপি