উন্নয়নের নামে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় : সিপিডি
দেশের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উন্নয়নের নামে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করা হচ্ছে।
রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি। এতে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিডিপির সম্মানীত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া সিডিপির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিনিয়র গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।
এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিভিন্ন দিক ছাড়াও দেশের ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি তুলে ধরা হয়।
দেশের উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে কত টাকা ব্যয় হয়, সেটা আমাদের জানা আছে। তা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশে আরও বড় বড় তিন-চারটা মেগাপ্রকল্প চলছে, তার ব্যয় বিশ্লেষণ করলেও একই তথ্য পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, আমরা যতটা না উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে চিন্তিত থাকি, তার চেয়ে বেশি চিন্তার বিষয়- এর গুণমান নিয়ে। এটা এখন প্রকাশ্য, যে ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেটি দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়নের ফলে তার প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু প্রকল্পগুলো অতি মূল্যায়িত হয়েছে কি না সেটা কিন্ত বড় বিষয়। একটা বিষয় হলো- সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিকে সামনে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি হয়। আরেকটি বিষয়- প্রথমে আপনি এক টাকা নির্ধারণ করে পরে তিন টাকা ধরে ব্যয় বাড়ালেন কি-না? দেশের জন্য প্রকল্পগুলো প্রয়োজন, কিন্তু অতি মূল্যায়নের কারণে, বৈদেশিক লেনদেনের পরিস্থিতি সমস্যার ক্ষেত্র আরও ঘনীভূত করছে।
দেবপ্রিয় বলেন, একটা বিষয়- দশকব্যাপী বাংলাদেশ যে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ভোগ করে আসছে, সেই সামষ্টিক স্থিতিশীলতার ভেতরে কিছু ক্ষেত্রে চিড় দেখা দিচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে বেশকিছু উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করছি। দ্বিতীয় বিষয়- বিগত সময়কাল ধরে আমরা একটি শোভন প্রবৃদ্ধির ধারার মধ্যে আছি। এই শোভন প্রবৃদ্ধির ধারা বাংলাদেশে যথোপযুক্ত আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং বৈষম্য বিলোপের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর পেছনে বড় কারণ হলো- যতখানি প্রবৃদ্ধি মাত্রা নিয়ে আলোচনা, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধির চরিত্র নিয়ে আলোচনা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আমরা ফল দেখতে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের আয়-ব্যয় তুলনীয় দেশের চেয়ে এখনো অনেক কম। কিন্তু বাজেট বা আর্থিক ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কারণ এটা ৫ শতাংশের নিচে থাকছে। সিপিডির মূল আশঙ্কার জায়গাটি হলো- এটার অর্থায়নের ক্ষেত্রে অতি পরিমাণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে করা হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর এই যে নির্ভরশীলতা এ বছর হয়েছে, যখন কি-না বিদেশি ঋণ গত বছরের চেয়ে বেশি এসেছে। অর্থাৎ অর্থায়নের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নির্ভরশীলতা কিন্ত সেই অর্থে যাচ্ছে না। তারপরও আর্থিক খাত নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ আছে এমনটার চেয়ে বেশি উদ্বেগ আছে বৈদেশিক খাত নিয়ে।’
‘আমাদের আর্থিক খাতের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিন্তু বৈদেশিক লেনেদের পরিস্থিতি খুব আশঙ্কাজনক পর্যায়ে গেছে। এটার ফলে টাকার মূল্যমান বাড়তে থাকবে। এতে কিছু রফতানিকারক হয়তো সাময়িক খুশি হবে। তবে অবধারিতভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি করে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে মজুরি বাজারে চাপ সৃষ্টি হবে। সরকার আগামীতে গার্মেন্ট খাতের মজুরি পুনর্বিবেচনা করবে। এগুলোর ওপর আরও চাপ বাড়বে। টাকার মূল্য হ্রাসের ফলে যদি মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, তবে অবধারিতভাবে সুদের হারও বাড়বে। কারণ প্রকৃত সুদের হার নির্ভর করে দেশের মূল্যস্ফীতির হার কত তার ওপর। ফলে এক ধরনের দুষ্টুচক্রের মধ্যে ঢুকে গেছে বৈদেশিক খাত,’- বলেন দেবপ্রিয়।
এমএ/জেডএ/এমএস