ই-সেবা বাস্তবায়নে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
২০২১ সালের মধ্যে জনগণের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ই-সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও দফতরের নিজস্ব উদ্যোগ রয়েছে।
কিন্তু এসব উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন ও জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশের প্রান্তিক পর্যাপ্ত উচ্চগতির কানেকটিভিটি স্থাপনে ‘স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজর ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে ‘চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ’।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি (ইডিসি)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে পণ্য, ভৌত কাজ এবং সেবাক্রয় সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য এ কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবনাটি উপস্থাপিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কানেকটিভিটি পৌঁছে দেয়াসহ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইসিটি প্লাটফর্ম স্থাপনের লক্ষ্যেই ইডিসি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত মেয়াদে আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য আলোচ্য প্রকল্পের পিডিপিপি (প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত ব্যয়ের মধ্যে সম্ভাব্য প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আট হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পিডিপিপি গত ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়নের কাজ চলছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পিডিপিপি বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাসে প্রেরণ করে। চীন সরকারের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরকালে ২৫টি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করে। আলোচ্য প্রকল্পটি ওই ২৫টির একটি।
সূত্র জানায়, সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে চায়না এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের ক্রয় কার্যক্রম চীনা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে জি-টু-জি’র মাধ্যমে ডিপিএম (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি) পদ্ধতিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা প্রকল্পের ক্রয় পদ্ধতি প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে ডিপিএম পদ্ধতি বাদ দিয়ে জি-টু-জি ভিত্তিতে সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে (এলটিএম) ক্রয়কার্য সম্পাদনের নির্দেশনা দেন।
এরপর চলতি বছরের ১১ এপ্রিল আবারও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টার সঙ্গে আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইডিসি প্রকল্পের ক্রয়প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে ডিপিএমর পরিবর্তে এলটিএম পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া সম্পাদনে অধিক সময় ব্যয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাই উভয় দেশর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আলোচ্য প্রকল্পের ক্রয়প্রক্রিয়া এলডিএম পদ্ধতির পরিবর্তে পুনরায় ডিপিএম পদ্ধতি করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। ‘স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভি’ সব সংস্থার কাজগুলোকে সমন্বয় করে আইসিটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
এমইউএইচ/এমআরএম/বিএ