‘ফারমার্স ব্যাংক আইসিবির ভূমিকায় প্রভাব ফেলবে না’
সমস্যায় জর্জরিত ফারমার্স ব্যাংক রক্ষায় মূলধন জোগান দেয়া হলেও, শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ভূমিকায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের পাশাপাশি আইসিবি থেকে ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংকটের সময় শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেয়া আইসিবির অন্যতম দায়িত্ব হলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি সমস্যায় জর্জরিত ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েছে। এতে শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে আইসিবির সামর্থ কমে যাবে বাজারে- এমন গুঞ্জন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির এমডি বলেন, ‘এর আগেও বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক শেয়ারবাজারে আসার আগে প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আমরা তাদের ৪০-৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনতাম। পরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজারে সেই শেয়ার ছেড়ে দিতাম। সুতরাং ফারমার্স ব্যাংককে মাত্র ৫৫ কোটি টাকা দিলে বাজারে সাপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের বিষয়ে আমাদের আগে সিদ্ধান্ত ছিল ৪০০ কোটি টাকার ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্টের। পরে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি মিলে ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেই। সেখানে আইসিবির মাত্র ৫৫ কোটি টাকা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে।’
ফারমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কাজী সানাউল হক বলেন, ‘পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের (আইসিবি, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক) এমডি ওই ব্যাংকের বোর্ডের (পর্ষদ) সদস্য হিসেবে ঢুকবে। আগামী সপ্তাহেই (চলতি সপ্তাহে) হয় তো আমরা পর্ষদে যুক্ত হব এবং নিয়ন্ত্রণটা আমাদের কাছেই থাকবে। আর দুজন স্বাধীন পরিচালক হিসেবে হয় তো বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসি থেকে প্রতিনিধি থাকবে। তার মানে ব্যাংকটি নিয়ে আর ভাবনার কিছু নেই।’
সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে টানা ১৩ কার্যদিবস দরপতনের ঘটনা ঘটে। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ করা হয় যে, আইসিবির নিষ্ক্রিয়তার (শেয়ার কেনা কমিয়ে দেয়া) কারণে এমন দরপতন ঘটেছে। এ বিষয়ে আইসিবির এমডি বলেন, ‘শেয়ার ক্রয় কমেছে এটা ঠিক। সাপোর্ট দিতে দিতে তো আমাদের সামর্থের একটা জায়গা থাকে। সবারই একটা লিমিটেশন থাকে। আনলিমিটেড তো সাবাই পারে না।’
‘অনেক বছর ধরে আইসিবির কাছে সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে অতিরিক্ত আমানত হিসেবে উল্লেখ করে ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরত দিতে আইসিবিকে নির্দেশ দেয়। এরপরই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থেকে দরপতনের ধারা দেখে দেয় শেয়ারবাজারে।’ এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কাজী সানাউল হক বলেন, ‘অনেক ব্যাংকের এফডিআর আমাদের কাছে আছে। মানি মার্কেটের ক্রাইসিসের একটা টান… গত ৬-৭ মাস ধরে ক্রাইসিসটা কেটে আসছিল। এটিকেও প্রায় পার করেছি এবং মার্কেটকে সাপোর্ট দিয়েছি। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে ওই টাকা লোকাল (স্থানীয়) মার্কেটে ছাড়া হয়েছে। যাতে লোকাল মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। বাজারকে সাপোর্ট দিতে বিভিন্নভাবে আমরা চেষ্টা করেছি।’
শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শেয়ারবাজারে ক্রাইসিস যাচ্ছে। আমরা মাঝে মাঝে বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য যখন শেয়ার ক্রয় করছি, তখনই বিক্রির চাপ চলে আসছে। ফলে সাপোর্টটা সেভাবে কাজে দিচ্ছে না। এজন্য সমস্যা খুঁজে বের করার জন্য আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম।’
গত বৃহস্পতিবার (২৪ মে) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং ব্রোকারেজ হাউজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে দরপতনের কারণ হিসেবে স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশ ব্যাংককে দায়ী করেন।
এ বিষয়ে কাজী সানাউল হক বলেন, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে (নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে) যে গ্যাপগুলো রয়েছে, তা যত কমানো যায় তত ভালো। মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেটম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর কিছু সমস্য রয়েছে। এজন্য আমরা সবাই মিলে ঘন ঘন বসার চিন্তা করছি, যাতে সামনের দিকে একটি ভালো মার্কেট হয়।
টানা দরপতনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার আইসিবি বড় অংকের শেয়ার ক্রয় করলে দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান ঘটে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করছি মার্কেটকে ভালো সাপোর্ট দেয়ার। বৃহস্পতিবার আমাদের কন্ট্রিবিউশন ছিল ৪০ শতাংশের মতো। এদিন আমরা একটি বিষয় দেখতে পাই, সাপোর্ট দেয়ার সময় মার্কেট ঘুরে যাচ্ছে এবং সূচক ভালো আচরণ করছে। সবাই মিলে এ সময় বিক্রির চাপটা কম দিলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’
শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেয়ার অংশ হিসেবে আইসিবি বিনিয়োগকারীদের মোটা অংকের সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো সুদ মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে প্রায় ১৪-১৫ হাজার বিনিয়োগকারী উপকৃত হবেন।’
এমএএস/এমএআর/পিআর