আতঙ্কে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা
সরকার থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দেয়ার পরও শেয়ারবাজারে টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
গত সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকল দেশের শেয়ারবাজার।
এ বিষয়ে মো. রায়হান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘গত মাসে শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দিলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শোনা যায় ব্যাংক কোম্পানিগুলো তারল্য সঙ্কটে রয়েছে, যার নেতিবাচাক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। ব্যাংকের তারল্য বাড়ার উদ্যোগ নেয়া হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এরপর সরকার থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হল। এরপর কিছুদিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থেকে আবার দরপতন হয়।’
তিনি বলেন, ‘সে সময় বাজারে গুঞ্জন ছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চীনা কনসোর্টিয়ামকে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন নাও দিতে পারে। আর যদি চীনা কনসোর্টিয়াম অনুমোদন পায় তাহলে বাজারে বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু বিএসইসি থেকে চীনা কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দেয়ার পরও বজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখছি না। বরং টানা দরপতন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এই আশায় শেয়ার বিক্রি না করে নতুন করে আরও কিছু শেয়ার কিনি। কিন্তু এখন দেখছি সব শেয়ারের দাম কমছে। আমার পোর্টফোলিওতে যে কয়কটি কোম্পানির শেয়ার আছে, সবগুলোয় আমি লোকসানে রয়েছি। এই দরপতন আর কিছুদিন অব্যহত থাকলে পুঁজি অর্ধেকে নেমে আসবে।’
রাইসুল ইসলাম নামে অপর এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘প্রতিদিনই আশায় থাকি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, আমার শেয়ারগুলোর দাম বাড়বে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে একদিনের জন্যও বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা পেলাম না। প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে, আর শেয়ারের দাম কমে একটু একটু করে পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পুঁজি হারানোর শঙ্কা।’
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল্যসূচকের পাশাপাশি রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। বাজারটিতে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২১৯টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির দাম ।
এদিন বাজারটিতে মোট ৩৭৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৬২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় ১৮৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার কম লেনদেন হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দু’টি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০১ পয়েন্টে।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপয়ার্ডের শেয়ার। আজ প্রতিষ্ঠানটির মোট ২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- বিএসআরএম, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, আরডি ফুড, ব্র্যাক ব্যাংক, লিগাসি ফুটওয়্যার, সিনো বাংলা এবং বিবিএস কেবলস।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৩৫ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। রোববার বাজারটিতে মোট ২৩১টি প্রতিষ্ঠানের ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৫৪টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ।
এমএএস/এমএমজেড/পিআর