ফারমার্সের শেয়ার কিনতে আইন শিথিল করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় এবং ধারণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে আইনি শর্ত পরিপালন শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনতে এসব ব্যাংকের আর কোনো বাধা থাকলো না।
রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয় ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। কার্যক্রমের শুরু থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ।
তারল্য সঙ্কটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে ব্যাংকটি দুরবস্থায় পড়েছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে দেখা দিয়েছে তহবিল সঙ্কট। এ জন্য আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ যেমন করতে পারছে না অপরদিকে নিয়মমতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এদিকে ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব কারণে ব্যাংকটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছে। তাই গ্রাহকের আস্থা ফেরানো ও তারল্য সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা দিয়েছে।
মঙ্গলবার ওই প্রজ্ঞাপণের নির্দেশনা বাস্তবায়নে একটি সার্কুলার লেটার জারি করে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার ক্রয় ও ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪ক ধারা এবং ২৬ক ধারার বিধান পরিপালন থেকে সাধারণভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো। এ ছাড়া এই চার ব্যাংক এবং আইসিবির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচাকদের ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের ২৩ (১) (ক) ধারার বিধান পরিপালন হইতে সাধারণভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ১৪ (ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি বা কোনো পরিবারের সদস্যরা একক, যৌথ বা উভয়ভাবে কোনো ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবে না। এ ছাড়া ২৬ক ধারার ফলে কোনো ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের পাঁচ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারে না। তবে রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক যে পরিমাণ শেয়ার কিনছে তা ১০ শতাংশের বেশি হওয়ায় এ দুই ধারা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৩ (১) (ক) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারে না।
জানা গেছে, সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক ১৬৫ কোটি টাকা করে মূলধন যোগান দেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মূলধন দেবে ৫৫ কোটি টাকা।
২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তারা ৪০১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তবে অনুমোদিত মূলধন রয়েছে ১৫শ’ কোটি টাকা। এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানকে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কিনতে হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের এমডিদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।
এসআই/জেডএ/বিএ