লোকসানি জুট স্পিনার্স ছুটছেই
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জুট স্পিনার্স বছরের পর বছর লোকসানি তালিকায় থাকলেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। এমনকি অনেক ভাল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের চেয়েও লোকসানি এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কয়েক গুণ বেশি।
জুট স্পিনার্সের শেয়ারের এ অস্বাভাবিক দাম বাড়ার বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বারবার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তা প্রকাশ করলেও তাতে কোনো ফল হচ্ছে না। বরং অস্বাভাবিকভাবে ছুটেই চলছে লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম।
সম্প্রতি শেয়ারের দাম ফের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ২৩ এপ্রিল জুট স্পিনার্স কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই।
জবাবে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে আবারও বার্তা প্রকাশ করলো ডিএসই।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতেও কোম্পানিটির বিষয়ে ডিএসই সতর্ক বার্তা জারি করে। সে সময় ডিএসই জানায়, কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনের কারণ জানতে চেয়ে ১০ জানুয়ারি নোটিশ পাঠানো হয়। এর জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার জন্য তাদের কাছে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকেই জুট স্পিনার্সের শেয়ারের দাম টানা বেড়েছে। ১ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১০৪ টাকা ৩০ পয়সা, যা টানা বেড়ে ১০ জানুয়ারি দাঁড়ায় ১৬৬ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ ১০ দিনের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে ৬২ টাকা ৩০ পয়সা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে ডিএসই ইতোপূর্বে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। ফলে সম্প্রতি আবার কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। ২৩ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে ১৮০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর মঙ্গলবার ডিএসই থেকে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হলেও প্রথম আড়াই ঘণ্টার লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৩ টাকার বেশি বেড়ে ১৮৩ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
শেয়ারের এমন অস্বাভাবিক দাম হলেও বছরের পর বছর ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। চলতি হিসাব বছরেও (২০১৭-১৮) কোম্পানির লোকসানের ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০১৭ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪ টাকা ৫ পয়সা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) লোকসান বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ চলতি হিসাব বছরের প্রথম ৬ মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৮ টাকা ৫৪ পয়সা।
ডিএসই বিনিয়োগকারীদের জন্য জুট স্পিনার্সের ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের শেয়ারপ্রতি আয় এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্যের তথ্য প্রকাশ করেছে।
ওই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সাল বাদে প্রতি বছরেই কোম্পানিটি লোকসানে দিয়েছে এবং সম্পদ মূল্যও ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিটির সব সম্পদ বিক্রি করলেও দায় পরিশোধ হবে না।
জানা গেছে ২০১৩ সালে জুট স্পিনার্সের শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪৮ টাকা ১৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য ছিল ঋণাত্মক ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা। পরের বছর ২০১৪ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪৩ টাকা ৬৪ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়ায় ঋণাত্মক ৮৩ টাকা ৯২ পয়সা।
এভাবে প্রতিবছরই কোম্পানিটি লোকসান করছে আর সম্পদ মূল্য ঋণাত্মক হওয়ার হার বাড়ছে। ২০১৫ শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়ায় ঋণাত্মক ১০৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর ২০১৬ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪২ টাকা ১০ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য ঋণাত্মক ১৪৭ টাকা ৪৪ পয়সা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, জুট স্পিনার্সের মোট শেয়ারের ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ৩৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার।
এমএএস/এমএমজেড/আরআইপি