ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে ক্রমেই কমছে ব্যাংকের দাপট

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ২১ মার্চ ২০১৮

শেয়ারবাজারের ক্রমেই কমছে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন। এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন কমে পাঁচ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক খাতে এক ধরনের আস্থার সংকট দেখা দেয়ায় শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ার লেনদেনে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, খেলাপি ঋণ, পরিচালকদের অনৈতিক কার্যক্রমসহ ব্যাংক খাত সম্পর্কে একের পর এক নেতিবাচক তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ সংকট দেখা দেয়ায় বেড়ে গেছে সুদের হার। এতে মানুষের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংক খাত খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। এ কারণে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো এবার ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। যার একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেনে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক মাসের মতো ফেব্রুয়ারিতেও লেনদেনের শীর্ষ স্থান ব্যাংক খাতের দখলে ছিলো। তবে এ খাতের শেয়ার লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজর ২৪৩ কোটি টাকার, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের মাস জানুয়ারিতে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ৯০০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

নতুন বছরে এসে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের দাপট কমলেও, ২০১৭ সালের শেষদিকে শেয়ারবাজারে মহাদাপট দেখায় ব্যাংক খাত। মোট লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই চলে যায় ব্যাংক খাতের দখলে। ব্যাংক খাতের দাপটের কারণে বছরজুড়েই ঊর্ধ্বমুখী ছিলো শেয়ারবাজার।

বছরটিতে ব্যাংকের দাপট সব থেকে বেশি ছিল সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। এই দুই মাসে ডিএসইতে যে লেনদেন হয় তার ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল ব্যাংকের। তবে নভেম্বর মাস থেকে লেনদেনে ব্যাংকের অবদান কমতে থাকে। নভেম্বর মাসের লেনদেনে ব্যাংকের অবদান ছিল ৩৩ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু জাগো নিউজকে বলেন, বাজার মূলধনের অর্ধেকই ব্যাংক, বীমা এবং আর্থিক খাতের। সমগ্র আর্থিক খাত একটা আস্থার সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট বেশি। বিনিয়োগকারীদের ধারণা এবার হয়তো ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

ব্যাংক খাতের লেনদেন চিত্র : ২০১৭ সাল

মাস

টাকা

মাস

টাকা

জানুয়ারি

হাজার কোটি

জুলাই

হাজার ৩২৪ কোটি

ফেব্রুয়ারি

হাজার ৩৬২ কোটি

আগস্ট

হাজার ৬১ কোটি

মার্চ

হাজার ৭১৬ কোটি

সেপ্টম্বর

হাজার ১৩৬ কোটি

এপ্রিল

হাজার ৮৪৭ কোটি

অক্টোবর

হাজার ৪১৭কোটি

মে

হাজার ৬৮৭ কোটি

নভেম্বর

হাজার ৭৬ কোটি

 

হাজার ৬৮৬ কোটি

ডিসেম্বর

হাজার ১৩৬ কোটি

২০১৮ সাল

মাস

টাকা

মাস

টাকা

জানুয়ারি

হাজার ৯০০ কোটি

ফেব্রুয়ারি

হাজার ২৪৩ কোটি

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের শেয়ার বিগত ১৪ মাসের মধ্যে সব থেকে কম হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক শেয়ারবাজারের লেনদেনেও। ডিএসইতে শেষ ১৪ মাসের মধ্য সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ৩৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকার শেয়ার। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১৯ হাজার ৪০৪ কোটি, মার্চে ২১ হাজার ৭৭০ কোটি, এপ্রিলে ১৫ হাজার ২২৩ কোটি, মে মাসে ১২ হাজার ২৫৮ কোটি, জুনে ১০ হাজার ১৫৬ কোটি, জুলাইতে ২০ হাজার ৯২৯ কোটি, আগস্টে ১৯ হাজার ৫৮৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৯ হাজার ৯৪৪ কোটি, অক্টোবরে ১৫ হাজার ৬৯৭ কোটি, নভেম্বরে ১৮ হাজার ৪২১ কোটি, ডিসেম্বরে ৯ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০ হাজার ৭২ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৭ হাজার ৫২২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বখতিয়ার হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যাংক খাত ভালো করলে শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার ব্যাংক খাত খারাপ করলে শেয়ারবাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাত খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্তা অনেক কমে গেছে। তার নেতিবাচক প্রভাব সার্বিক শেয়ারবাজারে পড়েছে।

ডিএসইর খাতভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসইতে লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ খাত। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এ খাতের মোট ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার শেয়ার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের মাস জানুয়ারিতে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয় ১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার, যা মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩০ কোটি টাকার, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। মোট লেনদেনে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ অবদান রেখে এর পরের স্থানেই রয়েছে বস্ত্র খাত। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এ খাতের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৬৪ কোটি টাকা।

বাকি খাতগুলোর মধ্যে জানুয়ারিতে মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ আর্থিক খাতের, ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ খাদ্য খাতের এবং ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের। লেনদেনে বাকি সবকটি খাতের এককভাবে অবদান ৪ শতাংশের নিচে।

এর মধ্যে বিবিধ খাতের ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সিরামিকের ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ভ্রমণের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, টেলি কমিউনিকেশন ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, আইটি ২ দশমিক ২৮ শতাংশ, চামড়া ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, বীমা ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, সিমেন্ট ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড দশমিক ৯৭ শতাংশ, সেবা ও আবাসন দশমিক ৮৬ শতাংশ, পাট দশমিক ২৪ শতাংশ এবং কাগজ ও মুদ্রণের দশমিক ২২ শতাংশ।

এমএএস/এমএমজেড/জেআইএম

আরও পড়ুন