ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সরকারের ব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৫৬ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের চিত্র জাতীয় সংসদে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ত্রৈমাসিক বাজেট প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, সরকারের অর্থব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটের ঘাটতি ৫ শতাংশ। মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ শতাংশ। সুদহার ও মূল্যস্ফীতি কমেছে। রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে । আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনুকূলে রয়েছে।

জাতীয় সংসদে সোমবার এ ত্রৈমাসিক বাজেট প্রতিবেদন পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। পরিশিষ্টসহ ৩১ পৃষ্ঠার ‘বাজেট ২০১৭-১৮ : প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয় ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন’-এর ১৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সংসদে পাঠ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত। পরে প্রতিবেদনটি পঠিত ও উপস্থাপিত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

মুহিত বলেন, সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ, মুদ্রা ও আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার ওপর কোনোরূপ বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে না। প্রথম প্রান্তিক শেষে সরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ আগের বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে (১৩ দশমিক ৫ শতাংশ)। অধিক পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কমেছে। চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত বলেন, আমদানি ও সেবাজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলেও বৈদেশিক উৎস হতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে অনুকূল অবস্থা বিরাজ করছে। বৈদিশিক মুদ্রা হারের বিনিময় হারের সামন্য অবিচিতি হয়েছে, যা রফতানি ও প্রবাস আয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকারের অর্থব্যয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ

সরকারের অর্থব্যয় পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে বাজেটের মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হয়েছে বরাদ্দের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর উন্নয়ন বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ব্যয় হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, সরকারি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর অনুন্নয়ন-ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১১ শতাংশ। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এসব ব্যয়ের মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ৩৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট এডিপি বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।

আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ

রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। এসময় রাজস্ব আহরাণের পরিমাণ ৫১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাজেটের ঘাটতি ৫ শতাংশ

বাজেটের ঘাটতি পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছর শেষে মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র হতে জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ সংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাজেটে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮১৭ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক বহির্ভূত উৎসের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে জাতীয় সমঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ঋণের স্থিতি সহনীয়।

মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ শতাংশ

মুদ্রা ও ঋণ পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উচ্চ হারের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম প্রান্তিক শেষে মুদ্রা সরবরাহের বছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।

সুদহার কমেছে

সুদহার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদের হারের নিম্নমুখী গতিধারা বজায় আছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার প্রান্তিক শেষে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অপরদিকে ব্যাক ঋণের সুদের হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সুদহারের নিম্নমুখী ধারা বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে।

মূল্যস্ফীতি কমেছে

মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথম প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে

বৈদেশিক খাত সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ায় রফতানি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগের বছরে একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

প্রবাসী আয় বেড়েছে

প্রবাসী আয় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। কিন্তু চলতি অর্থবছরে তা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বড়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনুকূল

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, আমদানি ও সেবাজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলেও বৈদেশিক উৎস হতে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির কারণে সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে অনুকূল অবস্থা বিরাজ করছে। সেপ্টেম্বর শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে ৭ দশমিক ৯ মাসের আমাদানি ব্যয় মিটানো সম্ভব। বৈদিশিক মুদ্রা হারের বিনিময় সামন্য অবিচিতি হয়েছে, যা রফতানি ও প্রবাসী আয়ের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

চলতি বছরের মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ সল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সহজাত সক্ষমতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক রোডমডেল। তাই যে যাই বলুক সরকারের ঘোষিত অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।

এইচএস/জেডএ/পিআর

আরও পড়ুন