ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

যে কারণে ভারতের পরিবর্তে চীনের পক্ষে ডিএসই

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১০:০৬ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়ামকে বাদ নিয়ে চীনের কনসোর্টিয়ামকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সাতটি বিষয় বিবেচনা করেছে ডিএসইর নীতি নির্ধারকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জনায়, চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। আর ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ১৫ টাকা।

চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিয়েছে এবং শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়ার কোনো শর্ত দেয়নি। অপর কনসোর্টিয়াম কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আসার পাঁচ বছরের মধ্যে আইপিও’র মাধ্যমে নিজেদের শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে, যা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর পরিপন্থী।

শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়াম প্রয়োজনীয় সব অভ্যন্তরীণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ এখনো সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পায়নি।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম অনুযায়ী শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়াম ডিএসইর পর্ষদে একটি আসন চেয়েছে। আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের শর্ত লঙ্ঘন করে ডিএসইর পর্ষদে দুটি আসনের শর্তজুড়ে দিয়েছে।

বাজারে নতুন পণ্য আনতে দু’টি কনসোর্টিয়াম একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ প্রস্তাবিত সহায়তার জন্য ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবসায়িক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।

এদিকে শেনঝেন ও সাংহাই নির্দিষ্ট কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে আলাদা ও স্বাধীনভাবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসেও ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের বিষয়ে ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ নিশ্চিত করেনি।

আর ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ সরাসরি শেয়ার কেনার বদলে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ‘এনএসই স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’ নামে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত হবে না।

এ কনসোর্টিয়ামের অপর সদস্য নাসডাক ডিএসইর কোনো শেয়ার কিনবে না। মালিকানাবিহীন অংশীদারিত্ব নিয়ে কনসোর্টিয়ামে নাসডাকের উপস্থিতি ডিএসইর কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছে নীতি নির্ধারকরা। এছাড়া নাসডাক চার বছর ধরে ডিএসইর লেনদেন ব্যবস্থাপনায় ম্যাচিং ইঞ্জিন সরবরাহ করে।

ভারতকে বাদ দিয়ে চীনের কনসোর্টিয়ামকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আর একটি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে ডিএসই। এটি হলো কারিগরি সহায়তা সংশ্লিষ্ট।

শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়াম কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আটটি প্রস্তাব দিয়েছে। এসব কারিগরি প্রযুক্তির জন্য ১০ বছরের লাইসেন্স এবং নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত তিন বছরের ট্রেনিং ও কনসাল্টিং সার্ভিস ফ্রি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। দর প্রস্তাব অনুাযায়ী ডিএসইকে দেয়া এ প্রযুক্তিগত সহায়তার আর্থিক মূল্য ৩ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার।

অপরদিকে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে কোনো প্রযুক্তি সিস্টেম না দিয়ে শুধু পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য ডিএসইর সঙ্গে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে একটি ব্যবাসায়িক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে।

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে ডিএসইর পর্ষদ শেনঝেন ও সাংহাই কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কৌলগত বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়টিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। চীনের কনসোর্টিয়াম আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার প্রস্তাব দিয়েছে এবং ৩ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের প্রযুক্তি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া চীনের কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব সবদিক থেকেই ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ে ভালো। এ কারণে আমরা চীনের কনসোর্টিয়ামকেই কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ডিএসইর প্রস্তাব পেয়েছি। প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এমএএস/এএইচ/জেআইএম

আরও পড়ুন