কৌশলগত বিনিয়োগকারী : চীনের পক্ষেই ডিএসই
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) চাপের মুখেও কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণে আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
প্রতিষ্ঠানটি সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়ামের কাছেই শেয়ার বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার নেতৃত্ব এ প্রস্তাবনা বিএসইসিতে জমা দেয়া হবে।
‘যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএসইসিতে এ প্রস্তাবনা পাঠাব। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা আইনগতভাবে যাচাই করে তাদের সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে’- যোগ করেন তিনি।
এ সময় পাশে উপস্থিত থাকা ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, আমরা ডিএসইর প্রস্তাবনা এ সপ্তাহের মধ্যে জমা দেব।
ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার কিনতে দু’টি কনসোর্টিয়াম টেন্ডারে অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি হলো সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়াম এবং অন্যটি হলো ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক।
সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ জন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। এর পাশাপাশি ডিএসইকে ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়াম।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ জন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ১৫ টাকা। পাশাপাশি কারিগরি সহায়তাদের দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কী পরিমাণ কারিগরি সহায়তা দেবে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য টেন্ডারে উল্লেখ করেনি।
ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের দরপতন ওপেন করা হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে শেয়ারের সর্বোচ্চ দর এবং কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রস্তাব দেয়ায় ডিএসই পর্ষদ ওই দিনই চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ডিএসইর পর্ষদ।
তবে ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বসে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা অপর কনসোর্টিয়ামকে (ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক) কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেয়। এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বলেও ডিএসইর পর্ষদকে জানায়।
ডিএসইর পর্ষদের সিদ্ধান্ত নেয়ার এক কার্যদিবস পরই ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম ও এমডি কে এ এম মাজেদুর রহমানকে ডেকে নিয়ে যায় বিএসইসি। ওই বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও সিংহভাগ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসইসির এক কমিশনার ডিএসইর এমডি ও চেয়ারম্যানকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেন।
পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর আর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসির চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে ডিএসই প্রতিনিধিদের বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। এ সময় ডিএসইর প্রতিনিধিরা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বলেন, এটি করা হলে ডিএসইর স্টেকহোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্টেকহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে না। এছাড়া কমিশন ১১ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে যে আচরণ করেছে, ভবিষ্যতে এমন আচরণ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে দূরত্ব আরো বাড়বে।
বিএসইসির এমন চাপের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। তবে ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসইর ওপর চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে বিএসইসি। এ পরিস্থিতিতেই সোমবার পর্ষদ সভা করে ১০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে অনড় থাকলো ডিএসই।
এমএএস/এমএআর/আইআই