বিদেশি কর ফাঁকিবাজ ধরতে সক্রিয় হচ্ছে এনবিআর
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর ফাঁকিবাজদের ধরতে মরিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে বিদেশি কর ফাঁকিবাজদের করের আওতায় আনতে ৩০ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এবার সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে এনবিআরের সব কর অঞ্চলে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বিদেশিরা কর্মরত আছেন, এমন দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে এসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাবে এনবিআর গঠিত টাস্কফোর্স। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের ডাটাবেজের কাজও সম্পন্ন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গঠিত টাস্কফোর্স ৫টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে অনিবন্ধিত ১৫ বিদেশি চিহ্নিত করেছে, যাদের করের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ঝটিকা অভিযানের প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত করতে কর অঞ্চলগুলোকে বিদেশি কর্মী আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এই চিঠি দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ও ট্যাক্স লিগ্যাল এন্ড এনফোর্সমেন্টের সদস্য সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সাফল্য পেয়েছি। তাই বিদেশিদের কর জালের আওতায় আনার উদ্যোগকে আরও সক্রিয় করছি। কর অঞ্চলগুলোর কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পর শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানে ঝটিকা অভিযান চালানো হবে।
এনবিআর জানায়, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আয়কর আদায় করতে ২০১৬ সালে টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। এই টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদফতর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক টাস্কফোর্সকে ভাগ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ডাটাবেজের কাজ সমন্বয় করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে ডাটাবেজ তৈরির কাজ শেষ করা হবে। এজন্য একজন কমিশনারকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কমিটি নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। নিখুঁতভাবে ডাটাবেজ তৈরির জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে, যাতে তাদের তথ্য পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে কতজন বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন অথবা কর্মরত আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। তবে এনবিআরের কর অঞ্চল-১১'তে প্রায় ১১ হাজারের মতো বিদেশি রিটার্ন জমা দেন, যা বিদেশে পাঠানো রেমিট্যান্সের সঙ্গে চরম অসঙ্গতিপূর্ণ। শুধু ভারতে প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশি কর্মীদের করের আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেখা গেছে, অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে টুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন। এরপর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। আবার বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসা বিশেষ করে এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্ট, মার্চেন্ডাইজিং, পরামর্শকসহ অন্য বিদেশিদের বেতন-ভাতা গোপন রাখা হচ্ছে। মূলত কর ফাঁকি দিতেই এ কৌশল অবলম্বন করছে দেশীয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
পাশাপাশি গোপন চুক্তি অনুযায়ী, বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হচ্ছে। প্রতি বছরই মুদ্রা পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া অবৈধভাবে আসা বিদেশিরা মাদক চোরাচালান ও জাল মুদ্রা পাচারের মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আবার অনেক বিদেশি নাগরিক অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে দেশে প্রবেশের পর ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলছেন। ফলে তাদের খুঁজে বের করা যায় না। টাস্কফোর্সের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে বর্তমানে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। যেখানে বিদেশি কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মস্থলের ঠিকানা, বাংলাদেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, কাজের ধরন, বেতন-ভাতাদির তথ্য ও আয়কর পরিশোধের তথ্য উল্লেখ থাকবে।
ইতোমধ্যে টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও একটি স্থলবন্দরে আয়কর বুথ খুলেছে এনবিআর। ঢাকার হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরে আয়কর বুথের দায়িত্বে সহকারী কর কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। এসব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগের আগে অবশ্যই বিদেশিদের আয়কর প্রত্যয়নপত্র দেখাতে হচ্ছে। প্রত্যয়নপত্র দেখাতে না পারলে বিদেশ গমনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
এমএ/ওআর/এমএস