ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন জোগানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফারমার্স ব্যাংককে নতুনভাবে দাঁড় করাতে মূলধন জোগানের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠক শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর ফজলে কবিরের উপস্থিতিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, মূলধন জোগানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আইসিবির চেয়ারম্যান মজিব উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ফারমার্স ব্যাংককে কীভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ব্যাংকের অবস্থান এবং আমরা কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারি আজ সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা রেসকিউ করছি। ব্যাংকটিকে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতে দিতে পারি না। ব্যাংকটি যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখনও আইসিবি ছিল। তবে সে সময় আমাদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই অল্প। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আইসিবির কোনো সদস্য ছিল না।

গ্রাহকের আস্থা নেই এমন ব্যাংককে অর্থ দিয়ে আস্থা ফেরানো যাবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আস্থা নেই এটা ঠিক না। আস্থা ইতোমধ্যে ফিরে আসছে। আমরা হয়তো তাদেরকে সহায়তা করবো, এটা সবাই জানে। সাম্প্রতিক ডাটা (তথ্য) নিলে দেখা যাবে মানুষ ডিপোজিট দিচ্ছে, ব্যাংক লোন রিকোভারি করছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই।

ফারমার্স ব্যাংককে সঙ্কট উত্তোরণে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংক এবং একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আইসিবি একাই জোগান দেবে ৪৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পরিমাণে মূলধন হিসেবে জোগান দেবে।

ফারমার্স ব্যাংককে মূলধন জোগান দেয়া হলে কতো টাকা দেয়া হবে এবং এর বিনিময়ে আইসিবি ব্যাংকটির পর্ষদের থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে মজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ফারমার্স ব্যাংককে মূলধন জোগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এটি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংক আইসিবি থেকে বিনিয়োগ মূলধন হিসেবে নিতে আগ্রহী হলেও সোনালী, জনতা, রূপালী বা অগ্রণী ব্যাংক থেকে অর্থ মূলধন হিসেবে না নিয়ে ঋণ হিসেবে পেতে চায়। তবে ব্যাংকগুলো তাতে রাজি নয়। ব্যাংকগুলো চায় মূলধন হিসেবে অর্থ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধিকে পাঠাতে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয় ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। কার্যক্রমের শুরু থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ।

তারল্য সঙ্কটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতে ব্যাংকটি দুরাবস্থায় পড়েছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে দেখা দিয়েছে তহবিল সঙ্কট। এজন্য আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ যেমন করতে পারছে না, অপরদিকে নিয়ম মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতী। এরপর ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ প্রজন্মের এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা।

শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকটির আসল খেয়ে এখন ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।

এসআই/এমএএস/এমএমজেড/এমএআর/আইআই

আরও পড়ুন