শেয়ারবাজারে ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উত্থান
দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে রোববার বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১২৮ পয়েন্ট বা ২ শতাংশের বেশি। ২০১৫ সালের ২৫মে এরপরে এটিই সূচকটির সর্বোচ্চ উত্থান। অর্থাৎ প্রায় তিন বছরের মধ্যে ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ উত্থান হয়েছে আজ।
চীনের দুই শেয়ারবাজার ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার সংবাদ প্রকাশ পাওয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে দেখা দেওয়া আতঙ্ক কেটে যাওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে এমন বড় উত্থান হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দেশে আবার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এমন শঙ্কায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু খালেদা জিয়ারর মামলার রায়ের পরে বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে।
এর পাশাপাশি গত সপ্তাহেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে চীনের দুই শেয়ারবাজার। চীনের দু’টি শেয়ারবাজার কনসোর্টিয়াম করে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর পাশাপাশি তারা ডিএসইকে কারিগরি সহযোগিতা দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্থ হলো ডিএসইর ওপর চীনের শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষের আস্থা আছে। এটি দেশের শেয়ারবাজারের জন্য বিরাট সু-সংবাদ। তার বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে আজ শেয়ারবাজারে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচকের উত্থান হয়েছে। উভয় বাজারে লেনদেন হওয়ার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে মাত্র ২৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দাম। বাজারটিতে ৪৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালের ২৫ মে’র পর একদিনে এটিই ডিএসইএক্সের সর্চোচ্চ উত্থান। ২০১৫ সালের ২৫ মে ডিএসইএক্স বেড়েছিল ১৩০ পয়েন্ট।
অপর দু’টি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১২ পয়েন্টে।
শেয়ারবাজারের এমন উত্থানের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় কয়েকদিন টানা দরপতন হয়েছে। তবে রায়ের পর কোনো অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। যার ইতিবাচক প্রভাবে এমন উত্থান হয়েছে। এখানে আমি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখছি না।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, চীনের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হচ্ছে। এটা দেশের শেয়ারবাজারের জন্য বিরাট বড় ঘটনা। চীনের শেয়ারবাজার ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে চায়।
তিনি বলেন, এর অর্থ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপর চীনের শেয়ারবাজারের আস্থা আছে। এই সু-সংবাদের কারণেই বাজারে এমন উত্থান হয়েছে। এরপর পাশাপাশি খালেদা জিয়ার রায়ের পর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, রোববার ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ার। আজ কোম্পানিটির ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। আর ১৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- মুন্নু সিরামিক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্মা এইড, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, কেয়া কসমেটিকস, গ্রামীণ ফোন এবং সিটি ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ২৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৩৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন হওয়া ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২৩টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৪টির; আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টির দাম।
এমএএস/এমএমজেড/আইআই