দাপট কমেছে ব্যাংকের
দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের দাপট কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে সার্বিক লেনদেনেও। ফলে মাসের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেন কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যাংক খাতের লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে তিন ভাগের এক ভাগে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে নয় হাজার ২৩৮ কোটি টাকা, যা বছরটির এক মাসের হিসেবে সর্বনিম্ন লেনদেন। ২০১৭ সালের কোনো মাসেই ডিএসইতে এত কম লেনদেন হয়নি। মূলত ২০১০ সালের মহাধসের পর সদ্য বিদায়ী ২০১৭ সাল ছিল শেয়ারবাজারের জন্য ইউটার্ন। বছরটি জুড়ে শেয়ারবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে দীর্ঘ মন্দার পর লোকসান কাটিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী লাভের মুখও দেখেন।
শেয়ারবাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে আসতে বরাবরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যাংক খাত। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের লেনদেনে ব্যাংকের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডিএসইতে যে লেনদেন হয় তার ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল ব্যাংকের। নভেম্বর মাসের লেনদেনে ব্যাংকের অংশ ছিল ৩৩ শতাংশ। সেই অবস্থা থেকে মোট লেনদেনে ব্যাংকের অংশ কমে ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ মন্দার কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেশ কমে যায়। বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বাড়ে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেন। এ কারণে ব্যাংকের লেনদেন বেড়েছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা বেড়েছে। যে কারণে ২০১৭ সালজুড়ে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। টানা ঊর্ধ্বমুখীর কারণে মাঝে কিছুদিন দরপতন দেখা দেয়। বর্তমানে বাজার যে পরিস্থিতিতে আছে তাতে বিনিয়োগকারীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ব্যাংকের দাপটের কারণে গেল বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ডিএসইতে ৩৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর অংশ ছিল পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৫ শতাংশ। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় দুই হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। ব্যাংকের লেনদন কম হওয়ায় মোট লেনদেনের পরিমাণও কমে যায়। মাসটিতে ডিএসইতে লেনদেন হয় ১৯ হাজার কোটি টাকা। মার্চে আবার বাড়ে ব্যাংকের লেনদেন। সেই সঙ্গে বাড়ে মোট লেনদেন। মাসটিতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় চার হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। মোট লেনদেন বেড়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এপ্রিলে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় দুই হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা এবং মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। মে মাসে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকায়। ফলে মোট লেনদেনও কমে দাঁড়ায় ১২ হাজার কোটি টাকায়। জুনে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন কমে এক হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা হওয়ায় মোট লেনদেন কমে দাঁড়ায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকায়। জুলাই মাসে আবার বাড়ে ব্যাংকের লেনদেন। বাড়ে মোট লেনদেনও। মাসটিতে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় তিন হাজার ৩২৪ কোটি টাকা এবং মোট লেনদেন হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। আগস্টে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় পাঁচ হাজার ৬১ কোটি টাকা। মোট লেনদেন হয় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরজুড়ে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় আট হাজার ১৩৬ কোটি টাকা এবং মোট লেনদেন হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবরে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় ছয় হাজার ৪১৭ কোটি টাকা এবং মোট লেনদেন হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
নভেম্বর মাসে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয় ছয় হাজার ৭৬ কোটি টাকা এবং মোট লেনদেন হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। ডিএসই’র খাতভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক লেনদেন কমলেও শীর্ষস্থানটি ধরে রাখে খাতটি। টানা পাঁচ মাস লেনদেনের শীর্ষস্থান ব্যাংক খাতের দখলে থাকে। নভেম্বরের মতো ডিসেম্বরেও দ্বিতীয় স্থানে প্রকৌশল খাত। ডিসেম্বরের মোট লেনদেনে খাতটির অংশ ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ খাত। নভেম্বরের মোট লেনদেনে এ খাতের অংশ ছিল নয় দশমিক ৫৪ শতাংশ। বাকি খাতগুলোর মধ্যে ডিসেম্বরে মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ খাদ্য, ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ আর্থিক, ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বীমা, ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ সিমেন্ট, ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ টেলিকমিউনিকেশন, ২ দশমিক ৬১ শতাংশ বিবিধ, ২ দশমিক ২৯ শতাংশ চামড়া, ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ আইটি, ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ সিরামিক, ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ১ দশমিক ১৩ শতাংশ আবাসন ও সেবা, দশমিক ৭৫ শতাংশ ট্রাভেলস, দশমিক ৩৯ শতাংশ পাট, দশমিক ২৭ শতাংশ বন্ড এবং দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কাগজ ও মুদ্রণের।
এমএএস/ওআর/এমএআর/জেআইএম