ক্রেতা সামাল দিতে হিমশিম
ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে শেষ সময়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিংহভাগে প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীতে ভরপুর। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের এমন চাপে হিমশিম খেতে হয়েছে বিক্রয়কর্মীদের। অনেক স্টলের কর্মীরা একজন ক্রেতা বিদায় করে একটু জিরিয়ে নিবেন এমন সুযোগ পাননি।
বরাবরের মতো এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়ও দেশি বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেশকিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানও প্যাভিলিয়ন দিয়ে বসেছে। এর পাশাপাশি দেশীয় বেশকিছু ছোট প্রতিষ্ঠানও মেলায় স্টল দিয়ে বসেছে। মেলার প্রথমদিকে সব প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল বেশ কম। তবে সময় গড়ানো সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি।
মূলত মেলার ১৫ দিন যাওয়ার পরেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরে সমাগম বাড়তে থাকে। আর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই মেলা প্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল নামছে। এর মধ্যে শেষ শুক্রবার ও গতকাল শনিবার ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। এই দুই দিন এক প্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয় বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ।
শনিবার ছিল মেলার ২৭তম দিন। সে হিসাবে সময় না বাড়লে চলতি সপ্তাহেই সমাপ্তি ঘটবে এবারের বাণিজ্য মেলার। সুতরাং শনিবারই ছিল এবারের মেলার শেষ ছুটির দিন। তাই হয় তো রাজধানী ও আশপাশের বাসিন্দারা শেষ সময়ের কেনাকাটা করতে ছুটে এসেছেন।
উত্তরা থেকে আসা রাইসা মনি বলেন, মেলায় আসি আসি করে এতদিন আসা হয়নি। রিমনের (ছেলে) আব্বুর শুক্র ও শনিবার ছাড়া সময় নেই। গত শুক্রবার বাসায় মেহমান আসার কারণে আসতে পারিনি। শনিবার কোনো রকমের সুযোগ করে চলে আসলাম। কারণ আজ না আসলে আর মেলায় আসা হবে না।
তিনি বলেন, মেলায় আসার মূল উদ্দেশ্য ঘোরাঘুরি করা। কেনাকাটার খুব একটা ইচ্ছা নেই। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে কিনবো। এছাড়া ছেলের জন্য ভালো কিছু পেলে কেনার ইচ্ছা আছে। আমার জন্য তেমন কিছু কেনার উদ্দেশ্য নেই।
মেলার এক সময় ক্রেতা সংকটে থাকা আইক্রিমের স্টলগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। লাভেলোর প্যাভিলিয়নে গিয়ে এককর্মীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলেননি। প্যাভিলিয়নটির ইনচার্জ আল মামুনও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে কথা বলেননি।
একই অবস্থা দেখা যায় ঈগলুর প্যাভিলিয়নে। সেখানে বিজনেস প্রমোটার (বিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) বিবিএ’র শিক্ষার্থী শ্রাবণী বলেন, প্রথমদিকে অলস সময় পার করেছি। আর আজ দুইদিন জিরানোর সুযোগ পাচ্ছি না। এখন বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।
বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের বিক্রয়কর্মী মুক্তির হোসেন বলেন, ভাই এতোদিন বিক্রিই ছিল না। আজ দুই দিন ভালো বিক্রি হচ্ছে। এমন ভিড় যদি প্রতিদিন থাক তো তাহলেও মালিকের কোনো চিন্তাই ছিল না। ভিড়ের কারণে আমরা বিশ্রাম নিতে পারছি না, তাতে কোন দুঃখ নেই। কারণ বিক্রি ভালো হলে আমরাও সুবিধা পাবো।
টেস্টি ট্রিটের সামনে গিয়ে দেখা যায় প্রচণ্ড ভিড়। স্টলটির ভিতর থেকে ক্রেতাদের লাইন রাস্তা পর্যন্ত চলে এসেছে। ফলে ক্রেতাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রয়কর্মীদের। স্টলটিতে কথা বলতে গেলে এককর্মী বলেন, ভাই কথা বলার সুযোগ নেই। দেখতেই তো পারছেন কি অবস্থা। আমরা এক সেকেন্ড জিরানোর সুযোগও পাচ্ছি না।
ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়, বেস্ট বাই’র প্যাভিলিয়নেও। প্যাভিলিয়নটি থেকে ক্রেতাদের ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে।
আরএফএল, ভিশন, প্রাণ, নাবিস্কো, ফ্রুটিকা, অল টাইম, মি. নুডলস, কোকলা, জুয়েলারি ও শিশু খেলনার স্টল এবং গৃহস্থলীর স্টলগুলোতেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
গৃহস্থলী পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ী মো. আলম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে প্রথমদিক বিক্রি ছিল খুব কম। সব থেকে ভালো বিক্রি হয় শুক্রবার। আজও (গতকাল) ভালো বিক্রি হয়েছে। মেলায় যদি ১৫টি দিন এমন বিক্রি হতো তাহলে সবার মুখেই হাসি থাকতো।
এমএএস/জেএইচ