লোকারণ্য মেলায় প্রবেশে দীর্ঘ লাইন
বাণিজ্য মেলায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী। শুধু নগরবাসী নয়, ঢাকার আশপাশের লোকজনও আসছেন মেলায়। ফলে আজও (শনিবার) জনসমুদ্রে পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। দিনের শুরুতেই দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কয়েক দিনের তুলনায় শীতের তীব্রতা কিছুটা কম থাকায় সকালেই চলে আসেন অনেকে। আর দুপুরের পর মেলায় ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনসমাগম। একপর্যায়ে এ ভিড় পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মেলা প্রাঙ্গণসহ এর আশপাশের এলাকাও হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। দুপুরের পর মেলায় প্রবেশের লাইন লম্বা হতে থাকে। শেষ বিকেলে মানুষের ভিড়ে পা ফেলাও দায় হয়ে ওঠে।
মেলায় অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, চলতি বছরের প্রথম দিনে মেলা শুরু হলেও প্রথম দিকে বেচাবিক্রি তেমন ছিল না। তবে যতই দিন যাচ্ছে ততই বেচা-বিক্রি বাড়ছে। মেলার তৃতীয় সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেচাকেনারও ধুম পড়েছে।
মেলায় আগতরা বলছেন, শীত কম এবং ছুটির দিন থাকায় তারা কেনাকাটা করতে এসেছেন। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আকর্ষণে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মূল্যছাড়, তিনটি কিনলে একটি ফ্রি- এ জাতীয় অফারে হুমড়ি খেয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারাও।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, দুপুরের পর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত চলে আসে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের লাইন। দর্শনার্থীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কারের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় মেলার বাইরে দায়িত্বে থাকা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম নিয়ে এ বছর তাদের কোনো অভিযোগ নেই। পণ্যটি পছন্দ হলেই কিনছেন তারা। অন্যদিকে, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বিক্রেতারাও। মিষ্টি কথার পাশাপাশি কেউ দিচ্ছেন মূল্যছাড়সহ নানা অফার। থাকছে গ্যারান্টিসহ বিক্রয়োত্তর নানা সেবার নিশ্চয়তা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও মেলায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে গৃহস্থালি পণ্যের। পুরোদমে কেনাকাটা শুরু না করলেও ক্রেতারা বেছে বেছে গৃহস্থালি পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ঘুরছেন। দরদাম করছেন। পছন্দ হলে কেউ কেউ কিনছেন। আরএফএল, বেঙ্গল, পারটেক্স, আকতার ফার্নিচার, নাভানাসহ বিভিন্ন গৃহসামগ্রীর স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় সবচেয়ে বেশি।
বছরে একবার বাণিজ্য মেলার আয়োজন হওয়ায় কোম্পানিগুলো মেলা ঘিরে নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে আসে, যেগুলো বছরের অন্য সময় পাওয়া যায় না। নতুন ডিজাইন থাকায় এসব পণ্যের চাহিদা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
ধানমন্ডির বাসিন্দা তানবির হক মেলায় এসেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে। তিনিও সাড়ে চার হাজার টাকা মূল্যের গৃহস্থালির একটি প্যাকেজ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। তার স্ত্রী লাইবা হক বলেন, কিছু দরকারি জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। তবে নিজের ঘরের জন্য নয়, কয়েক দিন পর এক নিকটাত্মীয়ের বিয়েতে উপহার হিসেবে দেয়া হবে এসব।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, প্রতি বছরই মেলা উপলক্ষে সব ধরনের পণ্যে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। ফলে স্টল-প্যাভিলিয়নে ছুটে আসেন গ্রাহকরা। মিরপুর থেকে মেলায় আসা শিহাব-তানিয়া দম্পতি বলেন, মেলায় ছাড় পাওয়া যায়। এছাড়া ছুটির দিনে ঘুরতে আসা। পাশাপাশি কিছু কেনাকাটাও হয়। সব মিলে বাণিজ্য মেলায় আসাটাই এক ধরনের আনন্দের বিষয়।
মেলায় গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের স্টলগুলোতে ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া তরুণীরা ভিড় করছেন পোশাক ও গহনার স্টলগুলোতে।
এমএ/এমএআর/বিএ/জেআইএম