পার্কিংয়ে হ-য-ব-র-ল
ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের চরম সংকট দেখা দিয়েছে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। গাড়ি পার্কিং করতে না পেরে অনেক দর্শনার্থী মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ না করে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার, শুক্র ও আজ শনিবার এ সংকট চরম আকার ধারণ করে।
মেলার প্রথম দিকে রাজধানীজুড়ে তীব্র শীত থাকায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিত ছিল বেশ কম। সপ্তাহখানেক ধরে শীতের সেই তীব্রতা নেই। আবার মেলার শেষ সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। ফলে বাণিজ্য মেলায় বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের চাপ। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার জনসমুদ্রে পরিণত হয় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাণিজ্য মেলার প্রাঙ্গণ।
মেলায় আগতদের বড় একটি অংশ নিয়ে আসছেন ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল। ফলে চাপ পড়ছে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানগুলোতে। পার্কিংয়ের জন্য যে স্থান বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা শুক্র ও শনিবার বিকেল ৪টার মধ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ৪টার পর যারা গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে আসছেন তাদের সিংহভাগই অন্য কোথাও পার্কিং অথবা ফিরে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মেলা মাঠের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মীর ব্রাদার্সের মালিক মীর শহিদুল আলম বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার অনেক দর্শনার্থী গাড়ি পার্কিং করতে পারেননি- এটা সত্য। গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যার কারণে অসংখ্যা দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ না করে ফিরে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় এ সমস্যা হয়েছে। তবে পূর্বাচলে মেলার আয়োজন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
মীর শহিদুল বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার মেলায় আসা দর্শনার্থীদের চাপ থাকলেও গতবারের তুলনায় এবার টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশের সংখ্যা কম। মেলার প্রথম ১৮ দিন সাড়ে চার লাখের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে। ১৯তম দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে দেড় লাখের কম টিকিট। প্রত্যাশা ছিল এদিন দুই লাখের ওপরে টিকিট বিক্রি হবে। কিন্তু পার্কিং সমস্যার কারণে বিকেল ৫টার পর অসংখ্য দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ না করে ফিরে গেছেন।
শনিবারের টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, বিকেল পর্যন্ত টিকিট ভালোই বিক্রি হয়েছে। তবে শুক্রবারের তুলনায় কম। এখনও অনেক সময় আছে, আশা করছি শুক্রবারের মতো টিকিট বিক্রি হবে।
গত বছর মেলার তৃতীয় শুক্র ও শনিবার পড়ে ছিল ২০ ও ২১ জানুয়ারি। ওই দু’দিন সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়। এবার তৃতীয় শুক্র ও শনিবার পড়েছে ১৯ ও ২০ জানুয়ারি।
এদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় শুক্র ও শনিবার রাজধানী ও আশপাশের বাসিন্দাদের ঢল নামে বাণিজ্য মেলায়। বরাবরের মতো এবারও একই দৃশ্য। গতকাল গেট খুলে দেয়ার পরপরই মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা। বিকেল ৪টার পর দর্শনার্থীদের ঢল মেলা প্রাঙ্গণ থেকে গেটের সামনের ফাঁকা স্থান হয়ে আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে দর্শনার্থীদের নিয়ে আসা গাড়িও ছড়িয়ে পড়ে পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে বিভিন্ন সড়কে। ফলে মেলাকেন্দ্রিক সড়কগুলোতে ব্যাহত হয় যান চলাচল, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এদিনও অনেকে মেলা মাঠের সামনে এসে গাড়ি পার্কিং করতে ব্যর্থ হন। ফলে তারা ফিরে যান।
গাজীপুর থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে গত শুক্রবার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ মেলায় আসেন মো. মানিক মিয়া। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে উপস্থিত হন। সেখান থেকে দায়িত্বরতদের কাছ থেকে গাড়ি পার্কিংয়ের টিকিট নেন। কিন্তু সামনে এগিয়ে দেখেন গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। দায়িত্বরতদের কাছে সমস্যার কথা বলেও কোনো ফল পাননি। বাধ্য হয়ে মেলায় প্রবেশ না করে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানিক মিয়া বলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই, তাহলে তো মেলার রাস্তায় প্রবেশের আগেই ফিরিয়ে দেয়া উচিত ছিল। পার্কিংয়ের টিকিট দেয়ার পরও গাড়ি পার্কিং করতে পারছি না- এটা কেমন কথা। কাউকে বলেও লাভ হচ্ছে না। এমন অব্যবস্থাপনা থাকলে তো মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে গতকাল স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে মেলায় আসেন মো. জামিল। বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে কোনো যানজটে পড়িনি। কিন্তু ফার্মগেট থেকে মেলার সামনে আসতেই আধাঘণ্টার ওপর সময় লেগেছে। তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মোটরসাইকেল পার্কিং করতে গিয়েই বিপদ। পার্কিংয়ের জায়গা খালি নেই। দায়িত্বরতরা বলছেন- পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে রাখলে গাড়ির দায়িত্ব কেউ নেবে না। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে কি কোথাও গাড়ি রাখা যায়?
‘তাই মেলায় প্রবেশ না করেই ফিরে যাচ্ছি। এ সপ্তাহের কোনো একদিন অফিস ছুটি নিয়ে মেলা থেকে ঘুরে যাবো’- বলেন তিনি।
এমএএস/এমএআর/বিএ/আরআইপি